• আওয়ামী লীগ নেতা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা মানিকগঞ্জে

      প্রতিনিধি ১০ জুলাই ২০২৪ , ১১:০৪:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: শহীদুর রহমান ওরফে ভিপি শহীদ ও তার স্ত্রী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নারগীছ আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৩০ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়। গতকাল মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলা দুটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আল-আমিন। মামলার এজাহারে বলা হয়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় শহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেয়া হয়। ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি কমিশনে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। সম্পদ বিবরণীতে তার নামে ৩৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬৫০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং এক কোটি ৪৭ লাখ ৯১ হাজার ৪০৫ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট এক কোটি ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্যাদি প্রদর্শন করেন। তবে সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে শহিদুর রহমানের নামে এক কোটি ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫ টাকার সম্পদ অর্জনের রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়। তার আয়কর নথি পর্যালোচনায় ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২০২১ করবর্ষে সম্পদ অর্জনকালীন তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৮১০ টাকা। ফলে তার ব্যয়সহ অর্জিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই কোটি চার লাখ ৮৯ হাজার ৮৬৫ টাকা। দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তার স্ত্রীর সঙ্গে যৌথ নামে ব্যাংক ঋণ (মোট ঋণের ৫০% বা অর্ধেক) পাওয়া যায় ১৮ লাখ ছয় হাজার ২২৭ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যাংকঋণ বাদে সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় এক কোটি ৮৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩৮ টাকা। তার অর্জিত সম্পদের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় এক কোটি ৩১ লাখ ১১ হাজার ২৬৯ টাকা। এক্ষেত্রে তার আয় অপেক্ষা অতিরিক্ত সম্পদ পাওয়া যায় ৫৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৯ টাকা। যা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ বলে প্রতীয়মান হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় মামলাটি করা হয়। অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলায় নারগীছ আক্তারের বিরুদ্ধে স্বামীর অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদকে বৈধতা দানের অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত দুই কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার ৯২১ টাকা টাকার সম্পদ অর্জন ও দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৩০ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় নারগীছ আক্তারের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ করা হয়। ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি সম্পদ বিবরণী কমিশনে দাখিল করেন। সম্পদ বিবরণীতে তার নামে দুই কোটি ৭৪ লাখ ৫৩৮ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৬১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট তিন কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৮ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্যাদি প্রদর্শন করেন। তবে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে নারগীছ আক্তারের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বাবদ মোট তিন কোটি ৬৬ লাখ ৩২ হাজার ১৪২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্যাদি পাওয়া যায়। মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানাধীন সিংগাইর মৌজায় ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত বাড়ি নির্মাণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে তিনি ৩০ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬৪ টাকার সম্পদের তথ্যাদি গোপন করেছেন। তার স্বামীর সঙ্গে যৌথ নামে ব্যাংকঋণ বাদে সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় তিন কোটি ৮০ লাখ ২৩ হাজার ৯৮৬ টাকা। তার অর্জিত সম্পদের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৮৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬৫ টাকা। এক্ষেত্রে আয় অপেক্ষা অতিরিক্ত সম্পদ পাওয়া যায় দুই কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার ৯২১ টাকা। যা তার জ্ঞাত আয়ের সহিত অসংগতিপূর্ণ সম্পদ বলে প্রতীয়মান হয়। অভিযুক্ত নারগীছ আক্তার একজন গৃহিণী। তার নিজের আয়ের কোনো উৎস নেই। তিনি স্বামীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল। আসামি নারগীছ আক্তারে নামে বৈধ উৎসবিহীন ওই টাকার সম্পদ তার স্বামী শহিদুর রহমান কর্তৃক অবৈধভাবে অর্জিত বলে অনুসন্ধানকালে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারা ২৬(২) ধারা ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম জানান, দুদকে মামলার বিষয়টি আমরা জেনেছি। এ ব্যাপারে ভিপি শহীদ ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে, অভিযুক্ত ভিপি শহীদ ও তার স্ত্রীর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

    আরও খবর

    Sponsered content

    Design & Developed by BD IT HOST