প্রতিনিধি ২১ মে ২০২৩ , ৯:১১:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ
বাগেরহাটের মোল্লাহাটে স্থানীয় সংঘবদ্ধ দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে অসহায় একটি পরিবারকে পৈত্রিক ও ক্রয়কৃত বসতভিটা থেকে অবৈধভাবে উচ্ছেদে আদালতের আদেশ অবমাননা সহ সীমাহীন জুলুম, অত্যাচার ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার কোদালিয়া ইউনিয়নের সরসপুর গ্রামের দিন আলীসহ সংঘবদ্ধ দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ওই ঘটনার প্রতিকার – ন্যায় বিচার দাবিতে সংশ্লিষ্ট দ্বারে দ্বারে ঘুরছে অসহায় ভুক্তভোগী পরিবারটি। ভুক্তভোগী পরিবারটির প্রধান অসুস্থ অসহায় শ্যামল রায়ের অভিযোগে জানা যায়, তার চাচাতো ভাই হারান রায়ের থেকে ১৪.৬৬ শতাংশ জমি বিগত ১৯৯৬ ইং সালে তৎকালীন বাজার মূল্য ৬৫ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করে খরিদ করেন তিনি। যার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ওই গ্রামের ভজন কুমার রায় (কলেজ শিক্ষক), বিবেকানন্দ চৌধুরী (প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক) ও রসময় রায় (টেইলার্স মাস্টার)। এদের মাঝে রসময় রায় মৃত্যু বরণ করেছেন। অনিবার্য কারণে/কাগজপত্রের জটিলতায় ওই সময় দলিল না হলেও তাকে দখল বুঝিয়ে দেন হারান রায়। এরপর ২০০১ ইং সালে উক্ত জমিতে বসতবাড়ি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে একমাত্র আবাস স্থলে বসবাস করছেন শ্যামল রায়। পরবর্তীতে ওই জমির দাবিতে একই গ্রামের গিরিশ চন্দ্র হিরা গং (অন্য লোক) মোল্লাহাট সহকারী জজ আদালতে দেঃ ০৬/০৯ নং মামলা করেন। উক্ত মামলা পরিচালনার জন্য শ্যামল রায়কে ক্ষমতা হস্তান্তর/আমমোক্তারনামা দলিল দেন হারান রায়। যেহেতু হারান রায়ের থেকে নগদ টাকায় খরিদ ও পৈত্রিক জমিতে বসতভিটা তাই, সম্পূর্ণ নিজ খরচে উক্ত মামলা পরিচালনার পর গত ২০১৫ ইং সালে গিরিশ চন্দ্র হিরা গং’দের পরাস্ত করে জমির মালিক পক্ষে আদালতের রায় করাতে সক্ষম হন শ্যামল রায়। এরপর থেকে শান্তিপূর্ণ ভোগদখল করছেন তিনি। সম্প্রতি ওই জমি অন্যত্র বিক্রির গোপন ষড়যন্ত্র করে হারান চন্দ্র রায়। বিষয়টি জানতে পেরে মোল্লাহাট থানায় লিখিত অভিযোগ করেন শ্যামল রায়। এছাড়া বাগেরহাট আদালতে ন্যায় বিচার দাবিতে একটি মামলা করেন শ্যামল রায়, যার নং দেঃ ১০/২৩। এছাড়াও দুস্কৃতিকারীদের সীমাহীন দৌরাত্ম ও জবর-দখল ঠেকাতে ১৪৪ ধারায় বাগেরহাট অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন তিনি, যার নং মিস ২০৩১/২২ (মোল্লাহাট)। উক্ত মামলার কপি সংযুক্ত সহ অবৈধ উচ্ছেদ ষড়যন্ত্র দলিল যেন রেজিস্ট্রি না হয় সেই লক্ষ্যে গত ২৬/১২/২০২৩ ইং তারিখে সংশ্লিষ্ট মোল্লাহাট সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট লিখিত আবেদন করেন শ্যামল রায়। এছাড়া প্রায় প্রতিনিয়ত সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে গিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারকে স্মরণ করিয়ে দেন অসুস্থ (ক্যাথেটার) পরানো শ্যামল রায়। এরপরও আদালতের মামলা ও আবেদনের তোয়াক্কা না করে দুস্কৃতিকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মোল্লাহাট সাব-রেজিস্ট্রার মিন্টু চক্রবর্তী উক্ত দলিল রেজিস্ট্রি করেন। যার নং ৩৫২/২০২৩ ইং, তাং ২০/০২/২০২৩ ইং। সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক ওই দলিলের গ্রহীতা রমজান সরদার ও তার পিতা দিন আলী সরদার প্রকাশ্য সীমাহীন দৌরাত্ম সৃষ্টি করছেন। যার ধারাবাহিকতায় ১৪৪ ধারায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সম্প্রতি গভীর রাতে দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে অনধিকারে প্রবেশ করে বিভিন্ন প্রকার ফলদ ও বনজ গাছ কেটে ক্ষতি সাধন সহ কাঠ – বাঁশের ফ্রেমে চার চালার একটি টিনের ঘর তোলে দিন আলীর নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ দুস্কৃতিকারীরা। শ্যামল রায় আরও বলেন, পূর্বে থানায় করা তার অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আল আমিনকে রাতেই ফোন করে সাহায্য চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি বলেন, রাতে আসা যাবে না, সকালে আসবেন, এরপর সকালে যথারীতি আসলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দুস্কৃতিকারীদের সাথে চলে যান। এছাড়া আমাকে দিয়ে জোর পূর্বক আমার জমির একাংশের বেড়া খুলে দিতে বাধ্য করেন এসআই আল আমিন। তিনি এসকল ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ বিচার দাবি করে বলেন, আমি নিতান্তই অসহায় গরীব ও অসুস্থ। অভাবের কারণে অপারেশন করতে না পেরে ক্যাথেটার নিয়ে চলছি প্রায় একবছর যাবৎ। অসহায়-গরীব মানুষের বিচার পাওয়া এতোটা কঠিন তা আগে বুঝতে পারিনি। তাই আমার এমপি জনদরদী শেখ হেলাল উদ্দীন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্যে ন্যায় বিচার পেতে চাই। এছাড়া আর কোন উপায় নেই বলে অঝোরে কেঁদে ফেলে শ্যামল রায়। এবিষয়ে প্রত্যক্ষ সাক্ষী ভজন কুমার রায় (কলেজ শিক্ষক) বলেন, অনেক চাপ আছে তাই, গ্রামের মাতব্বরদের উপস্থিতি ছাড়া কিছুই বলতে পারছি না। তবে, তিন জনে একসাথে শ্যামলের সাথে গিয়ে হারান রায়ের কাছে জমির বায়না নগদ টাকা দেয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি। সাক্ষী বিবেকানন্দ চৌধুরী (প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক) জানান, আমি সহ তিনজন একসাথে যাই এবং শ্যামল রায়ের পক্ষে হারান রায়ের নিকট চল্লিশ হাজার টাকা হস্তান্তর করে ভজন কুমার রায়। স্থানীয় বিল্লাল মোল্লা (৭০) জানান, আমার দেখা এবং জানামতে হারানের থেকে জমি কিনে পান বরজ ও বাড়ি করে অন্তত বিশ বছর ধরে বসবাস করছেন শ্যামল রায়। সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য সবুর জানান, হারান বহু আগে ওই জমি শ্যামলের কাছে বিক্রি করেছে। সেই থেকে শ্যামল রায় পান বরজ ও বাড়ি করে স্বপরিবারে বসবাস করছেন। এর অন্যথা হলে সেটা অন্যায় হবে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, হারান ভারতে চলে যাবে তাই, ন্যায়-অন্যায়ের ধার-ধারছেনা, কেবল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আর জমির দলিল দিচ্ছে। এই সুযোগে দুস্কৃতিকারীরা নামমাত্র টাকা দিয়ে অধিক মূল্য উল্লেখ করে এ দলিল গ্রহণ ও অন্যায়ভাবে জবর-দখলে মেতেছে। এর থেকে মুক্তির উপায়ঃ হয় মোটা অংকের টাকা, না হয় ভিটাবাড়ি ছেড়ে যাওয়া। হারান রায় বলেন, শ্যামল রায়ের থেকে টাকা পয়সা নেই নাই। শ্যামল কিভাবে তার জমিতে বসবাস করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এমনিতেই খাচ্ছে। দলিল গ্রহীতার পিতা মোল্লাহাট থানা কম্পাউন্ড থেকে সাক্ষাতে বলেন, টাকা দিয়ে জমি কিনেছেন, হয় জমি না হয় টাকা যে কোনটা চাই। এ বিষয়ে পক্ষপাতের অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই আল আমিন বলেন, কোন পক্ষই তার আত্নীয় না, তাই কারো পক্ষে কিছু করা হয়নি।
Design & Developed by BD IT HOST