ব্যুরো প্রধানঃ
বাংলাদেশ স্কাউটস সিলেট অঞ্চল আমাদের স্কাউটিংয়ের মসৃণ চারণক্ষেত্র। এই অঞ্চল অনেক প্রথিতযশা স্কাউট নেতার জন্ম দিয়েছে, যাঁরা স্ব স্ব জায়গা থেকে স্কাউটিং সম্প্রসারণের অবদান রেখে চলেছেন। অনেকেই পরলোকগত হয়েছেন, যাঁরা স্কাউটিংকে মনেপ্রাণে ধারণ করে সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রেখে গেছেন। আমি ও আমরা সেই গৌরবময় ঐতিহ্যের জাতক, বাংলাদেশ স্কাউটস সিলেট অঞ্চলের স্কাউট জনবল।
দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের আমাদের গর্বের এই পীঠস্থান, বাংলাদেশ স্কাউটস সিলেট অঞ্চলের ত্রৈ-বার্ষিক কাউন্সিল সভা আগামী ১৯ এপ্রিল অনুষ্টিত হবে। এই কাউন্সিলেই আগামী তিন বছরের জন্য এতদঞ্চলের স্কাউট নেতা নির্বাচিত ও সুপারিশপ্রাপ্ত হবেন৷
তবে কাউন্সিল সভা নিয়ে পুরো অঞ্চল স্পষ্ট দুটি ভাগ পরস্পর মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। এসব ভাগের কোনো এক পক্ষ নতুন নেতৃত্ব তৈরির মুখরোচক স্বপ্ন দেখিয়ে আরেক পক্ষকে ‘সিন্ডিকেট’ আখ্যা দিচ্ছেন। অথচ তারা ‘সিন্ডিকেট’ ভাঙার নামে মূলত আরেক নয়া ‘সিন্ডিকেট’ নিয়ে হাজির হবার স্বপ্নে বিভোর।
এরমধ্যে গত দেড় মাসে দুই দুইবার কাউন্সিল সভা মুলতবি হয়েছে নানাবিধ জটিলতায়৷ এমনকি আঞ্চলিক পরিচালকের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তার বদলি পর্যন্ত হয়েছে। নির্বাচনী বিধিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন হওয়া সত্ত্বেও অদৃশ্য ইশারায় কোনোরূপ বাছবিচার ছাড়াই শেষমেশ সকল প্রার্থীরা সুযোগ পাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতার৷
কিন্তু তৃণমূল স্কাউটিং কী চায়? সিলেট অঞ্চল তো প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ স্কাউটসের অকৃপণ সহযোগিতার হাত প্রশস্ত করে গেছে৷ সিলেট অঞ্চলের অত্যাধুনিক স্থাপত্যে গড়া আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সিলেট আঞ্চলিক স্কাউট ভবন কিংবা মৌলভীবাজার জেলা স্কাউট ভাবন ও সুনামগঞ্জ জেলা স্কাউট ভবন বিগত সময়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জলজ্যান্ত উদাহরণ। এসব ব্যয়বহুল স্থাপনা নির্মাণের একটাই লক্ষ্য- কোমলমতি স্কাউটরা তাদের এক্টিভিটিজ করবে আর নেতারা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পাবেন। এখনো এ অঞ্চলের স্কাউটদের প্রত্যাশা, লক্ষণাবন্দ আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একটি লাক্সারিয়াস সুইমিংপুল হবে। অঞ্চলের চতুর্বার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কিংবা প্রোগ্রাম ও প্রশিক্ষণ চলবে আপন গতিতে। সময়ের সাথে সাথে তৈরি হবে আগামীর দক্ষ সুনাগরিক।
আরো অনুল্লেখ বহু প্রত্যাশা রয়েছে যা পূরণ করতে মূলধারা স্কাউট নেতাগণকে দায়িত্বে আসার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে বলে বিশ্বাস করি৷
এসবের বিপরীতে কতিপয় অসাধু অনুপ্রবেশকারী রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে দখলদারিত্বের হাবভাব নিয়ে হাজির হয়েছেন দৃশ্যপটে। এসবে ইন্ধন দিচ্ছেন নানা পর্যায়ের অতিমানবকূল; এমনকি ফ্যাসিস্ট আমলে তরতর করে পদোন্নতি পাওয়া আমলাদের কেউ কেউ উঠেপড়ে লেগেছেন, এক অসৎ ব্যক্তি আর স্কাউটের আইন-প্রতিজ্ঞা-মূলনীতি-লক্ষ্য-উদ্দেশ্য না জানা লোকদের দায়িত্বে নিয়ে আসার। নির্বাচনে জয়ের জন্য মরিয়া এই পক্ষ অঞ্চলের স্কাউটিং অগ্রযাত্রাকে কতদূর এগিয়ে নিতে পারবেন, এতেই তা প্রমাণ হয়ে যায়৷ জিঘাংসার বশবর্তী হয়ে তারা একজোট হয়েছেন; প্রতিশোধের এ এক ঘৃণ্য খেলা। তাদের ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতার অভাব থাকার পরও ধুরন্ধর জনৈক স্কাউট কর্মকর্তা এবং গুটিকয়েক আমলা-কামলাদের ক্ষমতার দৌড়ঝাঁপ দেখে মনে হচ্ছে, ‘লুটেপুটে খাওয়ার জন্যই আসছে বুভুক্ষুরা৷’
অতীতে যারা সিলেটের স্কাউট অঙ্গনকে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের আঁতুড়ঘরে পরিণত করতে চেয়েছিলেন এবং না পেরে স্কাউটিং থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন তারাই আজ সাধু সেজে কাউন্সিলরদের ভোট পেয়ে দায়িত্বে আসতে গিয়ে তাঁদের বিভ্রান্ত করছেন৷
এসব বিবেচনায় কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কারা স্কাউটিংয়ের জন্য দরকারি আর কাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আর সেটাই একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ হবে।
আগামী ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ স্কাউটস সিলেট অঞ্চলের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। এ দিন আমাদের অঞ্চল হয় তাঁর জৌলুশ ফিরে পাবে, নয়তো লুটেরাদের ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে ভেসে যাবে বহতা সুরমার কালস্রোতে।
পরিশেষে আমরা তেমন প্রতিনিধি যেন নির্বাচন করি, যারা স্কাউটিংকে রুটি-রুজির আঁধার না বানিয়ে অঞ্চলের স্কাউটিংকে নতুনমাত্রা এনে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
স্কাউটিং দীর্ঘজীবী হউক। বাংলাদেশ স্কাউটস সিলেট অঞ্চল, এগিয়ে যাক৷
মন্তব্য করুন
Design & Developed by BD IT HOST