
মো: নিশাদুল ইসলাম নিশাদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ
“সব অবৈধ অপসারণ” — কথাটি এখন পরিচিত স্লোগান, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বিগত ১০ বছরেও অবৈধ সংযোগ শতভাগ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি, এবং হবেও না। প্রতিদিনই বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড অসংখ্য অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে; অথচ একই লাইন কিছুদিন পর আবার যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। একেকটি সংযোগ ৪-৫ বার পর্যন্ত কেটে ফেললেও, রাতের আঁধারে আবার স্থাপন করা হচ্ছে!
আজ গ্যাস সেক্টরের এই দুরবস্থার অন্যতম মূল কারণ হলো — এলপিজি বোতল ব্যবসায়ীদের প্রভাব ও স্বার্থচক্র। তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ সীমিত করে নিজেদের বাজার প্রসারিত করতে চায়। ফলস্বরূপ, সাধারণ জনগণ বাধ্য হয়ে অবৈধ সংযোগের দিকে ঝুঁকছে।
এখন অবৈধ সংযোগ নেওয়ার জন্য কাউকে আর খুঁজতে হয় না — স্থানীয় প্রভাবশালী, লাইসেন্সবিহীন ঠিকাদার, পাইপ মিস্ত্রি, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহক নিজেই সংযোগ নিচ্ছে। কোথাও কোথাও জনপ্রতিনিধিরাও মানুষকে উৎসাহিত করছে অবৈধ সংযোগ নিতে! বিস্তৃত এই নেটওয়ার্কে কীভাবে রাতের আঁধারে সংযোগ হচ্ছে, তা সীমিত জনবল দিয়ে পাহারা দেওয়া প্রায় অসম্ভব।
মাঠের কর্মকর্তারা প্রতিদিন জীবনঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। কখন কোন এলাকায় হামলার শিকার হতে হবে, মার খেতে হবে সেই আতঙ্কে কাজ করছেন তারা। অথচ মানুষ ও মিডিয়ার চোখে কর্মচারীরাই যেন সব দোষের ভাগীদার! বদলি হয় অফিসার, কিন্তু অপরিবর্তিত থাকে অবৈধ চক্রের সিন্ডিকেট যারা এলাকাভিত্তিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
অবৈধ সংযোগের কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, আর সাধারণ মানুষ ভুগছে। তাছাড়া সিস্টেমেও গলদ রয়েছে — কোনো বাড়ির নিচতলায় বৈধ ৪টি চুলা থাকলে, দোতলায় গ্রাহক ৪টি চুলা কখনই সিলিন্ডার ব্যবহার করবেন না। তখন গ্রাহক নিজেই পাইপ ফিটার দিয়ে চুলা বৃদ্ধি করে নিচ্ছেন।
পৃথিবীর কোথাও ডুয়াল সিস্টেম জ্বালানি নেই। এলাকায় অবৈধ সংযোগের কারণে সিলিন্ডারযুক্ত বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে সে অবৈধ সংযোগে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। রাতের আঁধারে তাই হাজার হাজার অবৈধ লাইনে ভরে যাচ্ছে এলাকার পর এলাকা — কেউ তার খবরও জানে না। জানলেও কি করার আছে? লাইনে হাত দেওয়ার সক্ষমতা ও ক্ষমতা কতটুকু তার?
সিলিন্ডারভিত্তিক বাড়িতে ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না, মানুষ সিলিন্ডার নিতে ভয় পাচ্ছে — কারণ গত কয়েক বছরে অসংখ্য সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রাণহানি ঘটেছে।
এখন কঠোর অভিযান নয়, বাস্তবসম্মত সমাধান দরকার।
সমাধান একটাই — অবৈধ বন্ধে বৈধ সংযোগ চালু করা প্রয়োজন।যারা অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করছে, তাদের বৈধ করে জাতীয় রাজস্বের আওতায় আনলে সরকারও লাভবান হবে, জনগণও নিরাপদ থাকবে।
অতএব মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট বিনীত আবেদন —
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এই বেহাল অবস্থা পুনর্বিবেচনা করে দ্রুত বাস্তবসম্মত ও মানবিক পদক্ষেপ নিন।
বৈধ সংযোগ চালু করুন, নতুবা রাষ্ট্রীয় গ্যাস ব্যবস্থার এই মেরুদণ্ড ভেঙে পড়বে, এবং আমরা সবাই এক গভীর সংকটের মুখে পড়বো।
মন্তব্য করুন
Design & Developed by BD IT HOST