রহস্যময় পুরুষ ইলিশ! যাকে দেখা যায় না, ধরা যায় না! - দৈনিক অভিযোগ বার্তা
admin
২ অক্টোবর ২০২৪, ৯:১৭ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

রহস্যময় পুরুষ ইলিশ! যাকে দেখা যায় না, ধরা যায় না!

অনুবাদেঃএস এম ফিরোজ আহাম্মদ

ইলিশের বিচরণ কেবল মেঘনার অববাহিকাতেই সীমাবদ্ধ নয়। সাগর থেকে তারা মিয়ানমারের ইরাবতী নদী এবং পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথী-হুগলী নদীতে প্রবেশ করে। তা ছাড়া ইলিশের উপস্থিতি রয়েছে আরও সুদূরে। পূর্বের মেকং বদ্বীপ থেকে শুরু করে পশ্চিমের পারস্য উপসাগরেও দেখা মেলে তাদের।

আপনি যখন নিজ শহরের স্থানীয় বাজার থেকে একটি ইলিশ কিনবেন, সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল যে সেই মাছটি হবে নারী ইলিশ, যার পেটভর্তি ডিম। ইলিশের মৌসুমে আক্ষরিক অর্থেই দেশের কোণে কোণে প্রতিটি বাজার উপচে পড়ে নারী ইলিশে। অথচ পুরুষ ইলিশ যেন অমাবস্যার চাঁদের মতোই দুর্লভ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অক্টোবর মাসে যখন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম চলে, তখন প্রায় সমপরিমাণ নারী ও পুরুষ ইলিশই নদীর উজান পেরিয়ে আসে মিঠাপানিতে। তাহলে এই পুরুষ ইলিশরা সব যায় কই? কীভাবে তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে স্রেফ উধাও হয়ে যায়?

আমরা পুরুষ ইলিশ নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমরা এতেই খুশি যে সবগুলো মাছই নারী ইলিশ, আর তাদের পেটভর্তি ডিম। ক্রেতারাও এমন ইলিশই চায়, তাই এগুলোই বিক্রি হয়,’ বলেন মাছ ব্যবসায়ী মিরাজ আহমেদ। হাজী সিরাজ এন্টারপ্রাইজ নামে তার একটি ট্রেডিং হাউজ আছে।

এদিকে মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করে ওয়ার্ল্ডফিশ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। সেখানকার ইলিশ বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘ইকোফিশ প্রকল্প থেকে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রজনন মৌসুমে একটি ইলিশের ঝাঁকে নারী পুরুষের অনুপাত থাকে ৫৫:৪৫।’

তাহলে আমরা চারদিকে কেবল নারী ইলিশই দেখি কেন? কয়েক বছর আগে একই প্রশ্ন তাড়া করে বেড়ায় আব্দুল কাইয়ুম নামের আরেক সাংবাদিক ও পপুলার সায়েন্সের লেখককেও। তিনি চেষ্টা করেন রহস্যভেদের।

কাইয়ুম বলেন, ‘বেশ কয়েকজন জেলে ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে আমি জানতে পারি, পুরুষ ইলিশ আসলে আমরা যতটা ভাবি ততটা বিরল নয়। জেলেরা তাদের জালে পুরুষ মাছও ধরে, কিন্তু কোন মাছটি পুরুষ আর কোনটি নারী, তা তারা আলাদা করতে পারে না, কেননা পুরুষ ইলিশের কোনো জননাঙ্গ নেই।’

ড. ওয়াহাব বলেন, ‘নারী ইলিশরা যেভাবে পানিতে তাদের ডিম ছাড়ে, পুরুষ ইলিশরা পানি ঠিক সেভাবেই ছাড়ে তাদের বীর্য। আর এই দুটি জিনিস প্রায় একই রকম দেখতে। শুধু এটুকুই ব্যতিক্রম যে, পুরুষ ইলিশদের ভেতরে ডিম থাকে না, কিন্তু সে কথা ডিম ছাড়া নারী ইলিশদের বেলায়ও প্রযোজ্য।

গবেষণার দেখা যায় জেলেদের। জালে আটকা পড়া মাছগুলো আকারে ছোট এবং এরা দেখতেও ছিল তুলনামূলকভাবে দুর্বল, ক্ষীণকায় ও অনাকর্ষণীয়।সেখানকার প্রায় ৬২ শতাংশ মাছই ছিল পুরুষ। এটি ছিল প্রধানত একটি পুরুষ ইলিশের ঝাঁক, যা বেশ বিরল একটি ব্যাপার, কেননা একটি মাছের ঝাঁকে সাধারণত ৪০-৪৫ শতাংশ ইলিশ পুরুষ হয়ে থাকে।’

চাঁদপুরের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড. আনিসুর রহমান বলেন, ‘নারী ইলিশের মাঝে যে দীপ্তি দেখা যায়, পুরুষ ইলিশের ভেতর তা অনুপস্থিত। তারা দেখতে কদাকার না হলেও কিছুটা অনাকর্ষণীয় তো বটেই।

গতানুগতিক মাছের বাজারে তাই আর এসব পুরুষ ইলিশের ঠাঁই হয় না। জেলেরা সেগুলোকে আলাদা করেন এবং পাঠিয়ে দেন লবণ মাখিয়ে শুকানোর জন্য। স্থানীয় কৌশলে সংরক্ষিত এসব ইলিশকে বলা হয় ‘নোনা ইলিশ’।

ড. ওয়াহাব এভাবে ব্যাখ্যা করেন, স্যামন, স্মেল্ট, হিকরি শ্যাড, ল্যাম্প্রে এবং গালফ স্টার্জনের মতো ইলিশও একটি অ্যানাড্রোমাস মাছ, যারা একটি বিশেষ ধরনের জীবনচক্র অনুসরণ করে থাকে। তাদের জন্ম হয় মিঠাপানিতে। এরপর অভিবাসিত হয়ে আট মাস তারা সমুদ্রে চলে যায় এবং সেখানেই কৈশোর পেরিয়ে পরিণত মাছ হয়ে ওঠে। তারপর তারা আবার মিঠাপানিতে ফিরে আসে প্রজননের উদ্দেশ্যে।

ইলিশ যৌনকর্মে লিপ্ত হয় না। পুরুষ মাছ পানিতে তাদের ফোমের মতো শুক্রাণু ছেড়ে দেয় এবং নারী মাছ ওই ফোম-সদৃশ ব্রথের ওপর তাদের ডিম্বাণু ছেড়ে সেগুলোকে নিষিক্ত করে। অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে গবেষকেরা অবশেষে ইলিশের প্রজনন মৌসুমের দিনক্ষণ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলা আশ্বিন মাসের প্রথম চাঁদের আগে-পরে মেঘনা নদীসহ এর অসংখ্য শাখা-প্রশাখা ধরে ইলিশ মাছ উজান বেয়ে মিঠাপানিতে আসতে থাকে।

‘নদীর শক্তিশালী স্রোতের ফলে নারী ও পুরুষ উভয় ইলিশের শিরদাঁড়া বেয়েই শিহরণ বয়ে যায়।’ ড. আব্দুল ওয়াহাব ব্যাখ্যা করেন, ‘এতে তারা তীব্র যৌন উদ্দীপনা অনুভব করে, ফলে তুমুল বেগে উজান বেয়ে সাঁতরাতে থাকে।

ইলিশের বিচরণ কেবল মেঘনার অববাহিকাতেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা মিয়ানমারের ইরাবতী নদী এবং পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথী-হুগলী নদীতে প্রবেশ করে। তা ছাড়া ইলিশের উপস্থিতি রয়েছে আরও সুদূরে। পূর্বের মেকং বদ্বীপ থেকে শুরু করে পশ্চিমের পারস্য উপসাগরেও দেখা মেলে তাদের। এমনকি ইউফ্রেটিস নদীতেও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে ইলিশকে।

কিন্তু মেঘনার মোহনায় যে পরিমাণ ইলিশ দেখা যায়, আর কোথাও এই মাছকে এত বেশি দেখা যায় না,বলেন ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ প্রকল্পের প্রধান ড. ওয়াহাব।
‘তা ছাড়া সব ইলিশের পেটভর্তিও ডিম থাকে না, যোগ করেন তিনি।

ড. আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাজারে ডিমহীন নারী ইলিশও পাব। ডিম ছাড়ার পর ফিরতি যাত্রায় নারী মাছদের খুব ক্লান্ত দেখায়। তখন তাদেরকে পুরুষ ইলিশের মতোই অনাকর্ষণীয় দেখায়। ফলে একজন সাধারণ জেলের পক্ষে একটি ইলিশ নারী না পুরুষ, সেটা বুঝা মুশকিল।
মুল লেখাঃ লাইফ অফ হিলশা জার্নাল সাময়িকী থেকে নেওয়া

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নবীনগরে ওস্তাদ হাসান আলী খান স্মরণে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রকাশ্যে গুলি: লায়ন শাকিল ও সহযোগী আরিয়ান ভারতের সীমান্তে আটক

নওগাঁ -২ আসনে বিএনপি প্রার্থী সামসুজ্জোহার পক্ষে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা

এনসিপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ বিয়ে করেছেন

বলিউডে সালমান খান ও আল্লু অর্জুন কার জনপ্রিয়তা বেশি

অনলাইন সাংবাদিকতায় চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ কায়েম এখন সময়ের দাবি: নুরুজ্জামান লিটন

খালেদা জিয়ার লন্ডন নেওয়ার পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত

রাজশাহীতে প্রাসাদসদৃশ পরিত্যক্ত স্হাপনার সুড়ঙ্গ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে কৌতুহল

ঘাটাইলে অবৈধভাবে মাটি কাটায় ৭০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত

১০

ওসমানীনগরে পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের কর্মবিরতি স্ব্যাস্থ সেবা হুমকির মুখে নিয়োগবিধি বাস্তবায়নের দাবিতে

১১

কোম্পানির ৭১ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়েছেন কোটচাঁদপুরের আব্দুর রহিম

১২

নজিপুর বাসস্ট্যান্ড বনিক কমিটির নির্বাচনে সভাপতি আনোয়ার সম্পাদক মোস্তফা

১৩

সাবেক অর্থমন্ত্রীর ছেলে রেজা কিবরিয়া বিএনপি’তে যোগ দিয়েই ধানের শীষের মনোনয়ন পেলেন

১৪

জামালপুরে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন

১৫

কৃষক প্রশিক্ষণ ও জিংকসমৃদ্ধ ধানের বীজ বিতরণ অনুষ্ঠান

১৬

বেগম খালেদা জিয়া’কে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেওয়া হচ্ছে 

১৭

আজ ভোরে আবারও বাংলাদেশে মৃদু ভুমিকম্প , উৎপত্তিস্হল নরসিংদী

১৮

ইতিহাস গড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়

১৯

বেগম জিয়ার চিকিৎসায় এভার কেয়ার হাসপাতালে চীনের চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক 

২০

Design & Developed by BD IT HOST