জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস সম্পর্কে কিছু কথা।

প্রকাশ: ২ years ago

ঐতিহাসিক ১০ ই জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু’র স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। মহাকালের মহাকবি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালী জাতির জনক –বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরম শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সাথে স্মরণ করছি। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযথ মর্যাদায় জাতি দিবসটি পালন করবে আশা করি। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পাকহানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে এবং নিরীহ বাঙালীদেরকে হত্যা করে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যায়। ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারী পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তাই ১০ জানুয়ারী বাঙালী জাতি যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করে থাকে। বিষদ_বিবরণঃ ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়। জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করেন। সেদিনই বঙ্গবন্ধু ঢাকার উদ্দেশ্যে লন্ডন যাত্রা করেন। লন্ডনে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথের সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। লন্ডন থেকে ঢাকা আসার পথে বঙ্গবন্ধু দিল্লীতে যাত্রা বিরতি করেন। বিমানবন্দরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারী ঢাকায় পৌঁছেন। তাঁকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে লাখো জনতার সমাবেশ থেকে অশ্র“সিক্ত নয়নে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ১১ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। ৬ ফেব্র“য়ারী ভারত সরকারের আমন্ত্রণে তিনি ভারত যান। ২৪ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাঁর আজীবন সদস্যপদ প্রদান করেন। ১ মার্চ তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরে যান। ১২ মার্চ বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ভারতীয় মিত্র বাহিনী বাংলাদেশ ত্যাগ করে। ১৯ মার্চ মুজিব-ইন্দিরা ২৫ বছরের ভারত- বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত,২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু ব্যাংক,বীমা,পাট,বস্ত্র,চিনি ও জাহাজ শিল্পসহ ভারী শিল্প জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত ঘোষনা করেন। ১ মে তিনি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। ৩০ জুলাই লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর পিত্তকোষে অস্ত্রোপাচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর লন্ডন থেকে তিনি জেনেভা যান। ১০ অক্টোবর বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরী পুরস্কারে ভূষিত করে। ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণীত হয়। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বচনের তারিখ (৭ মার্চ ১৯৭৩) ঘোষণা করেন। ১৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদানের কথা ঘোষণা করেন। শেষ_কথাঃ তোমার সংগ্রাম –তোমার স্বাধীনতা বাঙালী পেয়েছে-বিজয়ের দিশা তুমি সর্বকালের বীর বাঙালী বাঙালীর ঐ মুজিব প্রাণের নেতা…. মুক্তিযুদ্ধের সময় দীর্ঘ ১০ মাস পাকিস্তানে কারাবাস শেষে ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলার মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। পাকিস্তানি পাকহানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের করে পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। কারাগারে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর বিচার। আর এই প্রহসনের বিচারে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আদেশ হয়। কিন্তু বিশ্ব জনমতের চাপের মুখে স্বৈরাচার পাকিস্তানি সরকার বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আদেশ কার্যকর করতে পারে নি। পাকিস্তানি পাকহানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালি জাতির উপর আক্রমণ শুরু করে। আর এই আক্রমণে লাখ লাখ নিরীহ বাঙালি প্রাণ হারায়। নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হয়। অবশেষে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ হানাদারমুক্ত হয়। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান সরকার সদ্য ভূমিষ্ঠ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১০ই জানুয়ারি বিজয়ীর বেশে বিশেষ বিমানে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন।এ সময় অস্থায়ী সরকার, আওয়ামী লীগ নেতারা,মুক্তিযোদ্ধাসহ লাখো মানুষ বিমানবন্দরে পুষ্পবৃষ্টিতে বরণ করে নেয় প্রিয় এই নেতাকে। বঙ্গবন্ধুও তার প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসা আর শ্রদ্ধায় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি নিজেই তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে।

লেখক:- সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সদস্য সচিব আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগ, ইকবাল আহমেদ লিটন,ও অভিযোগ বার্তার প্রধান উপদেষ্টা সম্পাদক।