ঠাকুরগাঁওয়ের গমের পরিবর্তে ভুট্টায় আগ্রহ চাষিদের

প্রকাশ: ১ বছর আগে

মোঃ সাইফুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি,

গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিরা উত্তরবঙ্গের শান্ত জনপদ ঠাকুরগাঁওয়ে এক সময় ব্যাপক হারে গম চাষ আবাদ হলেও বর্তমানে অন্যান্য ফসলের তুলনায় গমের ফলন ও লাভ কম হওয়ায় দিন দিন উৎসাহ হারাচ্ছেন গম চাষিরা । অথচ এই জেলার মাটিতে গমের আবাদ ভালো হলেও গমের তুলনায় ভুট্টার ফলন বেশি হয়। সেইসঙ্গে দাম বেশি হওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুকছেন কৃষকরা। জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য বছর যে জমিগুলোতে গম চাষ হতো চলতি বছরে সেই জমিগুলোতে এবার ভুট্টা চাষ করেছেন কৃষকরা। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০ সালে ঠাকুরগাঁও জেলায় গম চাষ হয়েছিল ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আর উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন। এর আগে ২০২২ সালে চাষ হয়েছিল ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে আর উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭১ মেট্রিক টন। চলতি বছরে চাষ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে আর উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৯ মেট্রিক টন গম। কৃষকরা বলছেন, গত বছর গমের দাম কম থাকায় এই বছর গমের তুলনায় ভুট্টা চাষ হয়েছে বেশি। এক বিঘা জমিতে গম চাষ করে পাচ্ছেন ২০ হাজার টাকা আর ভুট্টায় পাওয়া যায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। আর ৫০ শতকের জমিতে ভুট্টা পান প্রায় লাখ টাকা। গমে পান সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা। তাই আগামীতে গমের তুলনায় আরও বেশি করে ভুট্টা চাষ করবেন বলে জানান তারা। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের জাওনিয়া কোনপাড়া পাড়া গ্রামের কৃষক দজিম উদ্দিন বলেন, ‘যদিও আগে গম চাষ করতাম কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে গমের ফলন ভালো না হওয়ায় আলু আর ভুট্টা চাষ করছি।’ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কাচকালি গ্রামের আর এক কৃষক আব্দুল বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে গম উৎপাদন করতে খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকা আর বিক্রয় হয় ২০ হাজার টাকায়। আর ভুট্টায় খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা, বিক্রি হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। কৃষকরা গমের চাষাবাদ কমিয়ে ভুট্টা চাষ করেছেন বেশি। রাণীশংকেল উপজেলার কামারপুকুর এলাকার কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন ‘এক বিঘা জমিতে গম করে টাকা পায় ২০ হাজার আর ভুট্টা বিক্রয় করে পাই প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তাই আগামীতে আমি আর গম চাষ করব না। এজন্য এবার অল্প জমিতে গম করেছি ও ভুট্টা করেছি দুই বিঘা জমিতে। হরিপুর উপজেলার চোরভিটা বাজার এলাকার কৃষক আলোম বলেন, ভুট্টার তুলনায় গমের দাম ও ফলন কম। এদিকে এক বিঘা জমিতে কম হলেও ভুট্টার ফলন হয় ৯০ মণ কারও কারও ১০০ মণেরও বেশি হয়। গম চাষ করেত পরিশ্রমও বেশি লাগে ফলনও কম হয়। এক বিঘা জমিতে গম হয় সর্বোচ্চ ২০ মণ। ২০ মণ গমের দাম লাগে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা আর এক বিঘা জমিতে ভুট্টা পাই প্রায় এক লাখ টাকা। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে গমের আবাদের এরিয়া সর্বোচ্চ হলেও চলতি মৌসুমে গমের আবাদ কমে গেছে। গমের বাজার দর ভালো হলেও এক হেক্টর জমিতে ৪ টন গম পাওয়া যায়। আর একই জমিতে ভুট্টার ফলন হচ্ছে ১২ টন। গমের থেকে ভুট্টার ফলন প্রায় তিন গুণ বেশি হচ্ছে। তাই কৃষকরা গমের তুলনায় ভুট্টায় বেশি লাভবান হওয়ায় ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তবে আগামীতে গমের ভালো জাত ও ফলন বৃদ্ধি করতে পারলে জেলায় গমে আবাদ বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।