দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
কোন দোষ না করেও জীবনে অনেক বড় মূল্য দিতে হল সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের ঝুমগাঁও খাসিয়াবাড়ী গ্রামের উসমান আলীর ছেলে আব্দুস সাত্তারকে (২২)। সাজানো ধর্ষণ মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন তিনি। কিন্তু আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিছুদিন পর জামিনে মুক্তি পেলেও পান নি গর্ভধারিনী জননীকে। পূত্রের নামে দেয়া অপবাদেহ গ্লানি সইতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি। আর নবজাতকের পিতৃপরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষায় নির্দোষ প্রমাণ হলেও মা’র জন্য হাহাকার আর অপবাদের গ্লানি থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছেন এই যুবক।
জানা গোছ, দোয়ারাবাজর থানায় গত বছরের (২০২২) ১৬ মে নিজের বাকপ্রতিবন্ধী অবিবাহিত বোন নাজমা বেগমকে ধর্ষণসহ বিভিন্ন সময়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাকে গর্ভবতি করার লিখিত অভিযোগ দেন একই গ্রামের মৃত সুলতান মিয়ার ছেলে মো. মনজিল মিয়া (মামলা নং ৬/১৬/৫/২০২২)। পরদিনই মামলাটির এফআইআর হয়। তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই (নিরস্ত্র) সুপ্রাংশু দে দিলু। এজাহারে মনজিল মিয়া উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর বিকেলে নাজমাকে তার ঘরের মধ্যে একা পেয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন প্রতিবেশী আব্দুস সাত্তার। এরপর তাকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে এক পর্যায়ে অবিবাহিত নাজমা গর্ভবতি হয়ে পড়েন। তিনি ন্যায়-বিচার প্রার্থনা করেন।
এদিকে এমন অভিযোগে আব্দুস সাত্তার সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই আত্মসমর্পণ করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। কিন্তু আদালতের বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এমন ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়েন সাত্তারের পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে সাত্তারকে জামিন করাতে তার মা
ওই বছরের ২২ অক্টোবর কোর্টে যান। আসার সময় রোড এক্সিডেন্টে মৃত্যুবরণ করেন। এর কিছুদিন পর জামিনে মুক্তি পান আব্দুস সাত্তার।
এদিকে ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর ধর্ষণের কথা অভিযোগে উল্লেখ করলেও এর ৭ মাসের মাথায় ২০২২ সালের ২৫ জুলাই নাজমা এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
এই নবজাতকের পিতৃপরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য আদালতের নির্দেশে ডিএনএ টেস্ট করানো হয় ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে।
সেখান থেকে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর দেয়া রিপোর্টে বিশেষজ্ঞরা পরিস্কার উল্লেখ করেছেন, ওই নবজাতকের ডিএনএর সাথে আব্দুস সাত্তারের ডিএনএর কোন মিল নেই। সাত্তার তার জন্মদাতা পিতা নয়। ওই বছরেরই ২৭ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করে রিপোর্ট প্রদান করেন। মামলার বাদী মনজিল মিয়ার সহদোর খোকন ও তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগম সুনামগঞ্জ জজকোর্টের অ্যাডভোকেট আবুল বাশারের মাধ্যমে হলফনামা দিয়েছেন যে, তারা এই মামলার স্বাক্ষি নয় এবং আব্দুস সাত্তারের সাথে ঘটনার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। বরং মনজিলের শ্যালককে প্রায়ই তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে দেখেছেন তারা।
এদিকে জামিনে থাকলেও সাত্তার এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মারাত্মক বিপর্যস্ত অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ মাথায় নিয়ে তার মা মৃত্যুবরণ করেছেন। এখনো তাদের পরিবারের সদস্যদের সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে। মামলার রায় এখনো না হওয়ায় তারা কেউই স্বস্তিতে নেই।
সার্বিক বিষয়ে আলাপকালে আব্দুস সাত্তার বলেন, অমানষিক মানসিক নির্যাতনের মধ্যে বেঁচে আছি। বিনাদোষে আমাকে এবং আমার পরিবারকে নিয়ে এই নিষ্ঠুর এবং কুৎসিত খেলা খেলছে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল। মনজিল বা নাজমা তাদের হাতের পুতুল। তিনি ন্যায় বিচার দাবি করে বলেন, অপবাদের বোঝা মাথায় নিয়ে মার মৃত্যু হয়েছে। এখন আমরা মিথ্যা অপবাদ নিয়ে ধুকে ধুকে মরছি। এই মহলটি আমাদের পরিবারের মানহানী করছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই। তিনি আরও বলেন, আমার এলাকাবাসীর প্রতি আকুল আবেদন, মনজিল বা তার বোনের ছড়ানো মিথ্যা গালগল্প আপনারা বিশ্বাস করবেন না। বরং তাদের প্রতিরোধে সবাই এগিয়ে আসুন।