পাথর চাপা ইতিহাস -১৯৭৭

প্রকাশ: ১ বছর আগে

ইকবাল আহাম্মদ লিটনঃ

সেনা ও বিমান বাহিনীর কিছু সদস্যের অংশগ্রহণে ঘটা ১৯৭৭ এর অভ্যুত্থান কয়েক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়নি। এটি চলার সময় সেনানিবাসের ভেতরে ও বাইরে ঢাকার রাজপথে রক্তাক্ত সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়েন অভ্যুত্থানের পক্ষে-বিপক্ষের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। সেই অভ্যুত্থান ক্ষমতাকাঠামোয় কোনো পালাবদল ঘটাতে পারেনি; কিন্তু অভ্যুত্থান-প্রচেষ্টার দায়ে বিমান ও সেনাবাহিনীর শত শত সৈনিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁদের অনেককে গণফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল। গোপন বিচারে একরকম একতরফাভাবেই ফাঁসির রায় ধার্য ও কার্যকর করা হয়েছে। সেই তালিকা কখনো প্রকাশ করা হয়নি। ফলে ঠিক কত জনকে এভাবে প্রহসনমূলক বিচারে হত্যা করা হয়েছে সেই সংখ্যা জানা যায় না। বিচারের বাইরেও অনেককে মেরে ফেলা হয়েছে। অভ্যুত্থানের সময় সংঘাতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। কারাগারের অফিশিয়াল রেকর্ড থেকে কেবল ২০৯ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায় । ওই সময় শুধু ঢাকা, কুমিল্লা, বগুড়া ও রাজশাহী কারাগারে সৈনিকদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। অফিশিয়াল রেকর্ডসে দেখা যায়, ঢাকায় ১২১ জন ও কুমিল্লায় ৭২ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বগুড়ার অভ্যুত্থানের ঘটনায় বগুড়া কারাগারে ১৬ জন ও রাজশাহী কারাগারে ৩৯ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এর বাইরে আরো বহু জনকে যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ও ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, নানাভাবে তা অনুমান করা যায়। যেমন, কুমিল্লা কারাগারে ৭২ জনের ফাঁসির রেকর্ড থাকলেও লেখকের অনুসন্ধানের সময় ওই কারাগারের জল্লাদ এরশাদুর রহমান নিজে ৯৩ জনকে ফাঁসিতে ঝোলানোর কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ওই সময় এমনও হয়েছে যে, এক রাতে ১৯ জনের ফাঁসি কার্যকর করতে হয়েছে। রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত তাকে ফাঁসির দড়ি টানতে হয়েছে। এরকম অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনে আর কখনো ঘটেনি। দ্য সানডে টাইমস পত্রিকায় ১৯৭৮ সালের ৫ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে প্রায় ৬০০ জনের ফাঁসির কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া ১৯৮৭ সালে বিমান বাহিনী থেকে প্রকাশিত বিমান বাহিনীর ইতিহাস পুস্তকে ৫৬১ বিমানসেনাকে “হারানোর” কথা বলা হয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ডেমোক্রেসি অ্যান্ড দ্যা চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট বইয়ে অভ্যুত্থানের দায়ে ৪৮৮ জনের মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। লেখকঃইকবাল আহমদ লিটন, সদস্য সচিব আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগ ও প্রধান উপদেষ্টা সম্পাদক, অভিযোগ বার্তা।