বরগুনা জেলা প্রতিনিধি মোঃ সারোয়ার
বরগুনা দেশের দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী জেলা । সমুদ্র তীরবর্তী হওয়ায় এ জেলায় লঘুচাপ, নিম্নচাপ লেগেই থাকে। দুর্যোগপ্রবণ হওয়া সত্ত্বেও বরগুনায় কোনো আবহাওয়া অফিস নির্মাণ হয়নি। এতে সময় মতো সঠিক পূর্বাভাস না পেয়ে বার বার বিপর্যস্ত হচ্ছে এই জনপদ। ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এখানকার সাধারণ মানুষ, জেলে ও কৃষকরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত দিনের ঘূর্ণিঝড় সিডর, মহাসেন, আইলা, রোয়ানু ও মোরার সময় আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ঝড়ের গতি ও স্থান পরিবর্তনের অমিল ছিল এখানে। যে কারণে অনেক সমস্যার মুখে পড়তে হয় এই জেলার বাসিন্দাদের।
পাথরঘাটা উপজেলার বিষখালী নদীর বেড়িবাঁধ এলাকার রফিক বলেন, আবহাওয়া অফিস না থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের খবর পেলেই জলোচ্ছ্বাসের ভয়ে ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের কাছে গিয়ে আমাদের রাত-দিন বসে থাকতে হয়। একটি স্থানীয় আবহাওয়া অফিস আমাদের খুব দরকার।
বলেশ্বর নদীর এলাকার শানু মৃধা বলেন, মোগো বরগুনায় একটা আবহওয়া অফিস দরকার। মোগো এই জেলা প্রায় প্রায়ই দুর্যোগের সামনা সামনি হই। মোগো এই জেলায় একটা আবহওয়া অফিস থাকলে তাড়াতাড়ি সব খবরাবর জানতে পারমু।
পাবলিক পলিসি ফোরামের বরগুনা জেলা সভাপতি হাসান ঝন্টু বলেন, বিগত ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড়ের সময় আবহাওয়া অফিসের তথ্যের সঙ্গে অনেক গরমিল থাকায় গোটা উপকূলীয় এলাকায়ই জনসাধারণের ওপর বন্যার গতি ও স্থান পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে।
বরগুনা জেলা দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপ-পরিচালক কিশোর কুমার সরদার বলেন, এ জেলায় আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট কোনো অফিস না থাকার কারণে প্রায়ই আমাদের জনগণের তোপের মুখে পড়তে হয়। ঢাকা থেকে আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করতে যে সময় লেগে যায়, এখানে ততক্ষণে আবহাওয়া অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, এখানে বসে সঠিক সময়ে আবহাওয়ার সংকেত না পাওয়ায় আমরা সমুদ্রগামী জেলেদের সঠিক তথ্য দিতে পারি না। আর যে কারণে জেলেরা সমুদ্রে গিয়ে দুর্যোগের মুখোমুখি হয়। যার ফলে প্রতি বছরই ঝড়ের কবলে পড়ে বহু জেলে ট্রলার ডুবিতে মারা যাচ্ছেন।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে উপকূলীয় জেলা বরগুনা। এই জেলাটি দুর্যোগপ্রবণ একটি এলাকা এবং প্রতি বছরই এ অঞ্চলে বন্যা বা ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানায় জানমালের অনেক ক্ষতি হয়। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমরা ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। যদিও প্রয়োজন থাকার পরও আবহাওয়া অফিস না থাকায় এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের আক্ষেপ রয়েছে। তবে আশাবাদী শিগগিরই এখানে একটি স্থানীয় আবহাওয়া অফিস স্থাপন হবে, বিষয়টি দ্রুত সরকারের নজরে আসবে।