ফিরোজ মাহমুদ :
মিষ্টির কথা শুনলেই যে কারো জিভে জল চলে আসে।যে কোনো অনুষ্ঠানে ভালো কোনো সংবাদ পেলে মিষ্টির খোঁজ সবার আগে। এই প্রচলন কে সামনে রেখে রংপুরে গড়ে উঠেছে রকমারি মিষ্টির দোকান,আধুনিক নামের এ-সব দোকানে বিক্রি হচ্ছে নানান রকমের মিষ্টি।৩/৪ বছর আগেও রংপুর মহানগরীতে হাতে গোনা কয়েকটি মিষ্টি দোকান ছিল, কিন্তু বর্তমানে নগরীর প্রতিটি বাজারে কমবেশি মিষ্টি দোকান চোখে পড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে- দিন যত যাচ্ছে রংপুরের মানুষের কাছে মিষ্টির কদর ততই বাড়ছে। ফলে অনেকেই এখন এই মিষ্টির ব্যাবসার সাথে যুক্ত হয়েছে,নগরীর বেশ কিছু মিষ্টির দোকান ঘুরে দেখাগেছে বর্তমান এক কেজি মিষ্টি ২৪০ টাকা থেকে শুরু করে ৪৫০ টাকা পযন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের এসব মিষ্টি রংপুর মহানগরের মিষ্টির দোকানের পাশাপাশি রেস্টুরেন্টেও মিলছে ।মিষ্টির ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে খোঁজে পাওয়া যায় মুলত বাঙালিরা ছানা তৈরি করতে শিখেছে পর্তুগিজদের থেকে। তাদের কাছ থেকে বাঙালি ময়রারা ছানা ও পনির তৈরির কৌশল শেখে। উপমহাদেশে ছানা তৈরির শিক্ষাবিস্তার অনেক পরের ঘটনা। আগের দিনে মিষ্টি তৈরি করা হতো বেসন, নারকেল ও মুগের ডালের সঙ্গে চিনির সংযোগে। এ ছাড়া শুধু চিনি দিয়ে তৈরি এক ধরনের চাকতিকেও অনেক সময় সন্দেশ বলা হতো। নীহাররঞ্জন রায় তাঁর বাঙালির ইতিহাস বইয়ে বাঙালির মিষ্টিজাতীয় যে খাদ্যের বিবরণ দিয়েছেন, তাতে সংগত কারণেই ছানার কোনো মিষ্টির উল্লেখ নেই।প্রথম দিকে ছানা ও ছানার মিষ্টি একরকম পরিত্যাজ্যই ছিল ধর্মীয় কারণে। বৈদিক যুগে দুধ ও দুধ থেকে তৈরি ঘি, দধি, মাখন ইত্যাদি ছিল দেবখাদ্য। বিশেষ করে ননি ও মাখন অত্যন্ত প্রিয় ছিল শ্রীকৃষ্ণের। এ জন্য দুধ থেকে রূপান্তরিত ওই সব খাদ্য শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু ছানা তৈরি হয় দুধ বিকৃত করে, এ জন্য মনুর বিধানমতে, ছানা ছিল অখাদ্য।এ সম্পর্কে সুকুমার সেন তার কলিকাতার কাহিনী বইয়ে লিখেছেন, “ক্ষীর-মাখন-ঘি-দই—এগুলো কাঁচা দুধের স্বাভাবিক পরিণাম, কৃত্রিম অথবা স্বাভাবিক। কিন্তু কোনোটিই দুধের বিকৃতি নয়। ‘ছানা’কিন্তু ফোটানো দুধের কৃত্রিম বিকৃতি। বাঙালি অন্য দ্রব্য সংযোগ করে দুধ ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে, যাতে সারবস্তু ও জলীয় অংশ পৃথক হয়ে যায়। এভাবে দুধ ছিন্নভিন্ন করা হয় বলেই এর নাম হয়েছিল বাংলায় ‘ছেনা’, এখন বলা হয় ‘ছানা’। সংস্কৃত ভাষায় ছানার কোনো রকম উল্লেখ নেই। অন্য ভাষাতেও ছিল না। আগে অজ্ঞাত ছিল বলেই শাস্ত্রসম্মত দেবপূজায় ছানা দেওয়ার বিধান নেই।” দুধ থেকে তৈরি মিষ্টির মধ্যে আছে দই, পায়েস ও ক্ষীরের কথা। সন্দেশের উল্লেখ আছে, তবে সেই সন্দেশ ছানার নয়। তিনি বলেছেন, ‘কোজাগর পূর্ণিমা রাত্রে আত্মীয়-বান্ধবদের চিপিটক বা চিঁড়া এবং নারিকেলের প্রস্তুত নানা প্রকারের সন্দেশ পরিতৃপ্ত করিতে হইত এবং সমস্ত রাত বিনিদ্র কাটিত পাশা খেলায়।’
বাংলাদেশের যে সকল জেলায় পাবেন এই সুস্বাদু মিষ্টি:তার মধ্যে রংপুর জেলার নাম নেই বললেই চলে।তবে ব্রিটিশ আমলে এই রংপুর মিষ্টি তৈরির জন্য গোটা উপমহাদেশেই বিখ্যাত ছিল।