শীতলকুচি, ৭-ই এপ্রিল

News Editor
প্রকাশ: ১ বছর আগে

 

কলকাতা থেকে দেবাশীষ রায়ঃ

জায়গাটি তিস্তা নদীর এক পাড়ে অবস্থিত, ওই পাড়ে পঞ্চগড় । এখানেই এক সময় থাকত দুটি পরিবারের দুই ছেলেমেয়ে বিভূতি ও ইতি । পরে বিভূতির পরিবার বিভক্ত হয়ে যায়, এক জায়গায় তার মা ও বোনের সাথে বিভূতি চলে যায় মাথাভাঙ্গায় থাকতে । তার বাবা বীরেন রায় স্কুল মাস্টার ছিলেন । ওদিকে ইতির বাবা বিমল বর্মণও স্কুল শিক্ষক ছিলেন । এলাকায় অত্যন্ত সজ্জন ও পরোপকারী হিসেবে তার পরিচয় আছে । লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো ছিল বিভূতি । কিন্তু কবে যে তলায় তালায় তার প্রেম পর্ব শুরু হয়েছিল প্রাক্তন শিক্ষক বিমল বর্মণের শীতলকুচি কলেজের পড়ুয়া ছোট মেয়ে ইতির সাথে সেকথা অনেকেরই অজানা । যদিও বিভূতি দাবী করছে গত চার বছর ধরে তারা সম্পর্কে ছিল । বর্তমানে নাকি ইতি তাকে ধোঁকা দিয়ে অন্য কারো সঙ্গে প্রেমে লিপ্ত হয়েছে । এবং যেহেতু তার মা বাপ উভয়েই রাজনীতির বিভিন্ন পদে আছেন, তাই তারা বিভূতিকে মার খাওয়ানোর হুমকি দিয়েছিল । সে যাই হোক, এই হত্যাকাণ্ডের কিছু আগে সে ইতিদের বাড়ির খুব কাছে একটি মেস বাড়ির ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে সেখানে থাকতে শুরু করে এবং এভাবেই হত্যাকাণ্ডের ছক পাকা হয় ।
ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ ইতির বাবা বিমল বাবু শৌচ কর্মের জন্য ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন । সারা রাত ঘাপটি মেরে থাকা বিভূতি তৎক্ষণাৎ ধারালো একটি বড় চাকু নিয়ে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে । স্বামীর চীৎকার শুনে ভিতর থেকে নীলিমা দেবী বেরিয়ে এলে তাকেও কুপিয়ে সাঙ্ঘাতিক ভাবে জখম করে আততায়ী । পিছনে পিছনে চীৎকার করতে করতে বেরিয়ে আসা বড় মেয়ে রুণাকে ও ইতিকেও কুপিয়ে জখম করে বিভূতি নামক সেই ঘাতক । বিমল বাবু ও তার স্ত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান ও বড় মেয়ে রুণা পরে কোচবিহারের হাসপাতালে মারা যায় । ইতি এখনো সেই হাসপাতালেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে । এদিকে প্রতিবেশীরা হৈ হল্লা শুনে আততায়ীকে কাবু করে ফেলেন ও তাকে গণধোলাই দেওয়া হয় । কিছু পরে শীতলকুচি থানার পুলিশও ঘটনাস্থলে চলে আসে ও অভিযুক্তকে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় ।
এইবার সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, অতীতে এমন কান্ড কদাচ ঘটত । কিন্তু কেন বর্তমানে এসব ঘটে চলেছে অহরহ ? অধিকাংশের মত এই যে, এটি একটি সামাজিক অবক্ষয় যা ঘটছে অভিভাবক দের তাদের সন্তান দের প্রতি অত্যন্ত নরম মনোভাবের কারণে । হাতে হাত গলিয়ে যখন ছেলে মেয়েরা দৃষ্টিকটু ভাবে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ায়, অথবা তার থেকেও অশ্লীল আচরণ সর্বসমক্ষে করে, তখন তাদের মা বাপ তো থাকে নিজের নিজের মতলব নিয়ে ব্যস্ত । বয়োজ্যেষ্ঠরা এদের কিছু বলতে ভয় পান অসম্মানিত হবার ভয়ে । তাই পূর্ববর্তী প্রজন্ম যদি দলবদ্ধ হয়ে এদেরকে শাসন করে পথে ফিরিয়ে আনবার চেষ্টা না করেন, যদি সমাজ কে এরা ভয় ও সম্মান করতে না শেখে, তবে কিছুতেই এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যাবে না ।