• Home
  • রাজনীতি
  • সবাইকে লেখাটি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি — নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জন করতে হয়৷ নেতা মানে অসামান্য ত্যাগের বিন্দুবিন্দু অর্জনে গড়ে ওঠা এক বিশাল প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি
Image

সবাইকে লেখাটি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি — নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জন করতে হয়৷ নেতা মানে অসামান্য ত্যাগের বিন্দুবিন্দু অর্জনে গড়ে ওঠা এক বিশাল প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি

-ইকবাল আহমেদ লিটন

‘নেতৃত্ব’ -একটি ছোট শব্দ। তবে এর গভীরতা ও প্রসারতা অনেক বেশি। নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন ও বিকাশ কোনোটা সহজে হয় না। এজন্য সময় লাগে, লাগে ত্যাগ, শ্রম আর অধ্যবসায়। মানুষের মনের মধ্যে প্রশ্ন আসতে পারে- নেতৃত্ব কি সহজাত না অর্জিত? আমি মনে করি- নেতৃত্ব হলো বুদ্ধিমত্তা, উন্নত মেধা, প্রজ্ঞা এবং ব্যক্তিত্বের সমন্বয় যা সর্বাধিক ও সর্বশ্রেষ্ঠত্বে পরিণত করার মাধ্যম হিসাবে কাজ করে থাকে। এ গুণগুলোর অধিকাংশই অর্জন করতে হয়। কিন্তু কেউ যদি বংশগতভাবে এ গুণগুলো নিয়েই জন্মগ্রহণ করেছে বলে মনে করে, তখনও তাকে সুশিক্ষা এবং কঠোর রীতিনীতির মধ্যেই এ গুণগুলোর চর্চা করেই সফল নেতা হতে হয়। পরিবার এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সততা, নিষ্ঠা, ধৈর্য, সহনশীলতা, দয়া ও দায়িত্ববোধের শিক্ষা৷ যাইহোক, ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধে আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন কেউ দেখাতে পারেনি কিন্তু সেই কাঙ্খিত স্বপ্ন দেখানোর স্বাধ বাস্তবে রুপান্তরিত করতে পেড়েছিলেন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ফসলের জন্য যেমন জমি কর্ষণ করতে হয়, বীজ রোপণ করতে হয়, পরিচর্যা করতে হয়, তেমনি নেতৃত্বের যোগ্যতাও অর্জন করতে হয়। নেতৃত্ব আপনা-আপনি আসে না। আকাশ থেকে পড়ে না। মাটি ফুঁড়ে গজায় না। তার জন্য পরিশ্রম করতে হয়। সাধনা করতে হয়। অধ্যবসায়ী হতে হয়। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রা.) যথার্থই বলেছেন, নেতা ও দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য বিদ্যা অর্জন অপরিহার্য।

আমরা দেখেছি, যারা অনুসন্ধানী মনোভাবাপন্ন এবং যাদের নিরন্তর চেষ্টা আছে তারা নেতৃত্বের এ পথে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। যার লক্ষ্যই হলো নিজেকে বদলে দেওয়া এবং সমাজের উপকার করা -সেই সাথে অন্যকেও বদলে দেওয়া।

একজন সত্যিকারের নেতা জনগণের কল্যাণে কাজ করেন, তবে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে এমন কাজ করতে পারেন না, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের কল্যাণকে বিঘ্নিত করে৷ কিন্তু বর্তমানকালে নেতৃত্ব সম্পর্কে মানুষের ধারণা প্রকৃত নেতৃত্বের থেকে অনেক দূরে। এর মধ্যেই যাঁরা নিজের জীবন উন্নত করতে পারেন- তাঁরাই নেতা। অনুরূপভাবে যিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা দিয়ে তাদের সুখী করতে পারেন- তিনিই নেতা। একজন নেতা অবশ্যই সেরকম একজন ব্যক্তি যিনি ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারেন- সেটা তাঁর কাজেই হোক, নিজের মধ্যেই হোক কিংবা তুচ্ছতুল্য কোনো বিষয়েই হোক। একজন নেতা তাঁর নৈপুণ্য, শিল্প, মেধা-মনন ও পেশাদারিত্বের ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন। প্রত্যেক মানুষই জন্মগতভাবে নেতৃত্বের মানবীয় গুণাবলি নিয়েই জন্মগ্রহণ করে থাকে, যা তার শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে তার মধ্যে ধীরে – ধীরে প্রস্ফুটিত হয় এবং ক্রমশ তাকে নেতৃত্বের পর্যায়ে উন্নীত করে। নেতৃত্ব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের প্রচলিত ধারণাকে বদলে দেওয়া প্রয়োজন। এর অন্তর্ভুক্ত তারাই হবে যাদের লক্ষ্যই হলো নিজেদের বদলে দেওয়া এবং সমাজের উপকার করা। তারাই প্রকৃত নেতা হবে যাদের ইচ্ছা হচ্ছে মানুষের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করা। জনগণকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া। রাজনীতিটা তাদের সুবিধা পাওয়ার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হবে না।

আপনার প্রত্যেকটি ব্যক্তিগত অর্জন, আপনার জীবনের প্রত্যেকটি ইতিবাচক পরিবর্তন এবং প্রত্যেকটি দক্ষতা যা আপনি অর্জন করবেন সবই হবে আপনার একজন সফল নেতা হওয়ার এক-একটি ধাপ। একজন উন্নত মানুষ ও বড় মাপের নেতা হওয়ার জন্য প্রতিদিন আপনার মধ্যে বিদ্যমান নেতৃত্বকে বিকশিত করুন। বিকশিত করার ধাপ হচ্ছে অনুসারীদের প্রতি ইতিবাচক আচরণ এবং ব্যক্তিগত জীবনের নান্দনিক মূল্যবোধ। আমি মনে করি, অভিজ্ঞতার আলোকে বলি, কারো প্রতি অবজ্ঞা করে কঠোর আদেশ দেয়া অনুচিত। মিষ্টিভাবে আদেশ প্রদানের মধ্যে প্রবল শক্তি নিহিত থাকে। এতে ভালো ফল পাওয়া যায়।

একজন নেতা বা নেত্রীকে কথায় ও কাজে কেবল পারফেক্ট হলেই চলবে না, তাঁকে অনুকরণীয় গুণাবলির অধিকারীও হতে হবে। তাঁর কাছ থেকে মানুষ প্রেরণা পাবে। তিনি হবেন আদর্শস্থানীয়। মানুষ তাঁকে অনুসরণ করবে। তাঁকে দেখে শিখবে, উজ্জীবিত হবে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তারই সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা সফল ও সুন্দর এবং চমৎকার নেতৃত্বের মহা মানব মানবী এরাই সফল নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় উদাহরন -সেজন্য একজন নেতা বা নেত্রীকে চিন্তা-ভাবনা করে কথা বলতে হয়। তিনি যা বলছেন তাঁর তাৎপর্য, মর্ম এবং জনগণের মনে তা কী সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, সে সম্পর্কে তাঁর সঠিক ধারণা থাকতে হবে। কারণ রাজনীতিক অবস্থানের কারণে তাঁর প্রতিটি কথারই গুরুত্ব রয়েছে। তাই দৃষ্টিনন্দনের চেয়ে তাঁকে হতে হবে বেশিমাত্রায় উক্তিনন্দন। তাঁকে সবসময় স্মরণ রাখতে হবে তাঁর অসংলগ্ন বা বল্গাহীন উক্তি তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে পারে। আব্রাহাম লিংকন বলতেন : I get ready to talk to people, I spend two-thirds of the time thinking what they want to hear and one-third thinking about what I want to say.

আমাদের কি শুধু নেতৃত্বকে অসাধারণ গুণী রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ কিংবা বিজ্ঞানীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রাখা উচিত? আমাদের এই সীমিত জগৎ থেকে বেরিয়ে সুবিশাল মানবজাতির বলয়ে নিবিড় হতে হবে সুগভীর সখ্যে। সবকিছুই শেখা যাবে এবং সকলেই আত্ম-উন্নয়নে সক্ষম। মানব-উন্নয়নে বর্তমান প্রজন্মের নেতাদের প্রয়োজন তার জাতি ও মানুষকে উন্নত করা।

একজন মহান নেতা হওয়ার জন্য শুধু দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হলেই হবে না, নেতৃত্বের গুণাবলিও নিজের মধ্যে থাকা এবং লালন করা বাঞ্ছনীয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় নেতৃত্ব শুধু সহজাত কোনো বিষয় নয়, সঙ্গে থাকতে হবে অর্জনের নিরলস প্রত্যয়। আপনার প্রত্যেকটি ব্যক্তিগত অর্জন, আপনার জীবনের প্রত্যেকটি ইতিবাচক পরিবর্তন এবং আপনার প্রত্যেকটি দক্ষতা যা আপনি অর্জন করবেন সবই হবে আপনার একজন সফল নেতা হওয়ার এক-একটি ধাপ। সে ধাপগুলো পেরিয়েই সফল হতে হবে।

‘‘নেতা অসামান্য ত্যাগের বিন্দু-বিন্দু অর্জনে গড়ে ওঠা এক বিশাল প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি। যাঁর হৃদয় হিমালয়কে ছাড়িয়ে বিশ্বময় বিস্তৃত হয় আপন মহিমায়। যিনি অন্যের সুখে অনিন্দ্য তৃপ্তিতে ভাস্বর হয়ে উঠতে পারেন। নেতা সহস্র মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক এবং সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার স্বপ্নসাধ।” বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে।

আমরা যদি উন্নয়ন চাই, অগ্রগতি চাই, দারিদ্র্যের বিষবৃত্ত ভাঙতে চাই, তাহলে আমাদের সৎ, দক্ষ, মেধাবী ও সুশিক্ষিত নেতৃত্ব বেছে নিতে হবে। যাঁরা বুঝতে পারবেন দেশের আসল সমস্যা কী, কীভাবে হবে তার সমাধান, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কী চায়, কীভাবে তাদের সক্রিয় সমর্থন ও অংশীদারত্বের মাধ্যমে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায়।

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, অযোগ্য নেতৃত্ব, নীতিহীন নেতা ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সাথে কোনোদিন একসাথে হয়ে দেশের কাজে নামতে নেই। তাতে দেশসেবার চেয়ে দেশের ও জনগণের সর্বনাশই বেশি হয়। আজকের এই দিনে মহান নেতার বাণী প্রতিটি কাজের ধাপে – ধাপে মিলে যাচ্ছে।

জনগণ আর নেতার মধ্যে মিল আছে, সূত্র আছে, যোগাযোগ আছে। তবে দুজনের মধ্যে পার্থক্যও আছে। নেতা জনগণকে দেখে তার দুই চোখে, কিন্তু নেতাকে জনগণ দেখে অসংখ্য চোখে। দুই চোখ দিয়ে নেতা কোটি চোখকে প্রত্যক্ষ করেন, নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই নেতার দুচোখ জনগণের অসংখ্য চোখের চেয়ে প্রখর হতে হয়। এরূপ প্রখরতা যার নেই তিনি নেতা নন। একজন সত্যিকার নেতা দেশের উন্নয়নে জনগণকে নিয়োগ করতে পারেন, উদ্বুদ্ধ করতে পারেন, দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারেন এবং দেশকে সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।

নেতা ও নেতৃত্ব তাদের দায়িত্বকে ভালবাসার মোড়কে এবং প্রেমের বিদগ্ধ চেষ্টায় ভিন্ন আদলে গড়ে তুলতে পারে। এখানে দায়িত্ব শুধু কাজ নয়, আনন্দের প্রতিভূ, শান্তির প্রতিযোগ। যেখানে ভালবাসা আছে, প্রেম আছে সেখানে শান্তি অনিবার্য। ভালবাসার মূল্য দিতে হয়। এ মূল্য দিতে গিয়ে নেতা যখন আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠে, তখনই ঐক্যবদ্ধ উন্নয়ন জাতিকে মহাশক্তিতে পরিণত করে। প্রতিটি মানুষ হয়ে ওঠে এক একটা জাতি। নেতা হয়ে ওঠে অবিসংবাদিত।

পরিশেষে বঙ্গবন্ধুর একটা উক্তি দিয়েই শেষ করতে চাই -আমার দেশবাসীর কল্যাণের কাছে আমার মতো নগণ্য ব্যক্তির জীবনের মূল্যই -বা কতটুকু? মজলুম দেশবাসীর বাঁচার জন্য সংগ্রাম করার মতো মহান কাজ আর কিছু আছে বলিয়া মনে করি না।

—লেখকঃ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, -ইকবাল আহমেদ লিটন,সদস্য সচিব আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগ ,ও অভিযোগ বার্তার প্রধান উপদেষ্টা সম্পাদক।

Releated Posts

শিহাড়া ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি – বার্ষিক সন্মেলন অনুষ্ঠিত

মোকছেদুল ইসলাম,জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ নওগাঁ পত্নীতলা উপজেলার শিহাড়া ইউনিয়ন বিএনপি দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার ৬ জানুয়ারি সকাল…

ByByFeroz Ahmedজানু ৬, ২০২৫

রাজবাড়ীতে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ছাত্রদলের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

বিপ্লব বিশ্বাস রাজবাড়ীঃ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজবাড়ীতে বিশাল র‌্যালি করেছে জেলা ছাত্রদল। আজ ৪ জানুয়ারি…

ByByFeroz Ahmedজানু ৪, ২০২৫

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ সেনাপ্রধানের

অভিযোগ বার্তা ডেস্কঃ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল…

ByByFeroz Ahmedজানু ৩, ২০২৫

অবশেষে কারামুক্ত হলেন বিএনপি নেতা পিন্টু

অভিযোগ বার্তা ডেস্কঃ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু ১৭ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন। মঙ্গলবার (২৪…

ByByFeroz Ahmedডিসে ২৪, ২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Design & Developed by BD IT HOST