অভিযোগ বার্তা ডেস্কঃ
ধান দিয়ে দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন নাটোরের প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল। এবার তিনি সোনালি আঁশ পাট দিয়ে দুর্গাপ্রতিমা বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
নাটোর শহরের লালবাজার কদমতলার রবি সূতম সংঘ এই প্রতিমা বানানোর উদ্যোগ নেয়। পাটের দুর্গাপ্রতিমা দেখতে রোববার ষষ্ঠী থেকে দর্শনার্থী-ভক্তদের ভিড় বাড়ছে।
কদমতলার রবি সূতম সংঘ কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা প্রতিবারই দুর্গাপ্রতিমা তৈরিতে ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনা মাথায় রাখেন। এবারও ছয় মাস আগে থেকেই তাঁরা দুর্গাপ্রতিমার অবয়বে নতুন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। সংঘের সেবকেরা নানা ধরনের অবয়বের কথা বললেও পাট দিয়ে অবয়ব তৈরির প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। তাঁদের প্রস্তাবে সায় দেন প্রথিতযশা প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল।
দুই মাস আগে থেকে বিশ্বজিৎ পাল কাঠ, বাঁশ, মাটি ও উজ্জ্বল সোনালি বর্ণের পাটের আঁশ সংগ্রহ করে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন। দুই সপ্তাহ আগে প্রতিমার কাঠামো তৈরি শেষ হলে পাটের আঁশের বুনন শুরু করেন। শনিবার রাত অবধি সাজসজ্জার কাজ শেষ করে প্রতিমাটি মণ্ডপে স্থাপনা করা হয়। দুর্গার পাশাপাশি মণ্ডপে একইভাবে তৈরি লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর ও সিংহ স্থাপন করা হয়। শাড়ি ও অলংকার সবকিছুতেই পাটের সূক্ষ্ম আঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। এ জন্য প্রায় ২০ কেজি পাট লেগেছে।
শহরের লালবাজারের রাস্তা ঘেঁষে উত্তর পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বর্ণিল পূজামণ্ডপ। রোববার মণ্ডপের সামনে দর্শনার্থী-ভক্তদের আনাগোনা চোখে পড়ে। ষষ্ঠীর দিন প্রতিমা দর্শনে আসা সদর উপজেলার শংকরভাগ গ্রামের প্রদীপ চক্রবর্তী (৬৫) বলেন, জীবনে অনেক ধরনের দুর্গাপ্রতিমা দেখেছেন তিনি। কিন্তু পাটের আঁশের অবয়বে গড়া প্রতিমা কখনো দেখেননি তিনি। সবকিছুর মধ্যে নতুনত্ব খুঁজে পেয়ে খোশমেজাজে বাড়ি ফিরছেন। সপ্তমীর দিন তিনি নাতি-নাতনিদের নিয়ে আবারও আসবেন।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে আসা অঞ্জলি রানীর দাবি, তিনি প্রতিবছর এই মণ্ডপে আসেন নতুন কিছু দেখার জন্য। ভিড় এড়াতে ষষ্ঠীর দিনেই চলে এসেছেন। সময় নিয়ে খুব কাছে থেকে প্রতিমা দেখেছেন। তাঁর কাছে অসাধারণ লেগেছে।
মণ্ডপের পাশেই প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ পালের বাড়ি। তাঁর সঙ্গে আলাপে জানা গেল, বংশপরম্পরায় তাঁরা প্রতিমা তৈরির কাজ করেন। গত বছর ধানের প্রতিমা তৈরি করেছিলেন তিনি। দেশ-বিদেশের সবাই সেটি পছন্দ করেছিলেন। এবার পাটের আঁশ দিয়ে মোড়ানো প্রতিমা তৈরির অনুরোধ করা হয়। কাজটা খুব সহজ নয় জেনেও তিনি কাজটি শুরু করেন। দুই মাস নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে প্রতিমাটি তৈরির কাজ শেষ করেন।
পাটের বুনন সম্পর্কে এই প্রতিমাশিল্পী বলেন, কাজটা খুব চ্যালেঞ্জের। প্রথমে বাঁশ-কাঠের সঙ্গে মাটি দিয়ে প্রতিমার আকৃতি তৈরি করা হয়। পরে মাটি শুকিয়ে গেলে প্রতিমাটি পাটে মোড়ানো হয়। প্রায় ২০ কেজি আঁশ ব্যবহারের পর রংতুলির আঁচড়ে চোখ-মুখসহ পুরো প্রতিমার আদিরূপ ফুটিয়ে তোলা হয়। তাঁর বিশ্বাস, এই শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ হবেন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।
রবি সূতম সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ রায়ের মতে, ভক্তদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে প্রতিবছর তাঁরা ভিন্ন রকম প্রতিমা তৈরির উদ্যোগ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গতবার যেমন ধানের তৈরি প্রতিমা চারদিকে হইচই ফেলেছিল, এবার পাটের প্রতিমা সবার মন কেড়ে নেবে।
এ বছর নাটোর জেলায় ৩৬৮টি মন্দির ও মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খগেন্দ্রনাথ রায় বলেন, গতবারের চেয়ে ১৪টি পূজা এবার বেশি হচ্ছে। প্রতিটি মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে।
সুএঃ প্রথম আলো
মন্তব্য করুন
Design & Developed by BD IT HOST