নিউজ ডেস্কঃ
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলার সীমা বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রথম দিকে উত্তোলনের সীমা ১ লাখ টাকা থাকলেও পর্যায়ক্রমে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে তা বাড়ানো হয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ উত্তোলনের সীমা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)। তবে অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকরা কিছু ব্যাংক থেকে প্রয়োজনমতো টাকা তুলতে পারছেন না। নিজের টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে না পারায় গ্রাহকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এমনকি কোন কোন ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে গ্রাহক হচ্ছেন লাঞ্চিত।
সম্প্রতি এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) এক গ্রাহক নিজের গচ্ছিত স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ভাঙতে গেলে তাকে টাকা না দিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা উল্টো হয়রানি করেন। ওই গ্রাহকের অভিযোগ তাকে লাঞ্চিত করা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একজন নারী গ্রাহক এসআইবিএল এ নিজের সাড়ে ১৬ লাখ টাকার এফডিআর ভাঙতে চাইছেন। কিন্তু ব্যাংক থেকে তাকে টাকা না দেওয়ার কথা জানানো হয় বলে ওই নারী দাবি করেন। এ নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের খারাপ আচরণ তিনি তার নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করতে গেলে তাকে লাঞ্চিত করা হয় এবং ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।
ওই নারী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি দেশের বাইরে যাবো, তাই টাকা ভাঙাতে এসেছি। প্রথমে ব্যাংক থেকে বলছে আজ টাকা দেওয়া যাবে না, পরে আসেন, এখন ব্যাংকে টাকা নেই। আমি বললাম- আমি দেশের বাইরে যাবো, আমার টিকেট কাটা, টাকা তো এখন লাগবে। কিন্তু ওরা বলছে যে, আমাদের কাছে টাকা না থাকলে তো আপনাকে দিতে পারবো না। আমি বলছি, টাকা আপনাদের না। এ টাকা আমার। আমি রেখেছি আপনাদের কাছে। আমি তো আমার টাকা নিতে আসছি। ওরা বলে- আপনি বললেই তো দিতে পারবো না, আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে গিয়ে জিজ্ঞাস করেন।
তিনি আরও বলেন,আমি ম্যানেজারের কাছে গিয়ে বলার পর তিনিও আমাকে বললেন, এখন টাকা নেই। আপনি বের হন। তখন আমি বললাম, আমাকে বের করতে হলে আমার টাকা দিতে হবে। টাকা না দিয়ে আমাকে বের করতে পারবেন না। কিন্তু উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে চেষ্টা করে। আমি এসব মোবাইলে রেকর্ড করছিলাম। তখনই ম্যানেজার আমার ফোনটা ছিনিয়ে নেয় এবং ভেঙে ফেলে। এরপর অন্যদের বলছে, গেট লাগিয়ে দেও।
এদিকে সম্প্রতি এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক এক আদেশে বলেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ক্ষমতাবলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে।
২০১৭ সালে এসআইবিএলের মালিকানায় আসে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। এই গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের জামাতা বেলাল আহমেদ ছিলেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। ব্যাংকটি থেকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এ ব্যাংকের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে ব্যাংকটি আর্থিক সংকটে পড়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে রক্ষিত চলতি হিসাবেও ঘাটতিতে রয়েছে।
উল্লেখ্য, গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই ব্যাংক থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা তুলে নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। বর্তমানে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ কোটি। এতে ব্যাংক খাতের চলমান তারল্য সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। বর্তমানে অনেক ব্যাংকই তারল্য সংকটে পড়েছে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে পারছে না তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকে বিগত সরকারের প্রভাবশালীরা অনেক বেশি পরিমাণে নগদ টাকা উত্তোলন করেছেন। এতে অনেক ব্যাংকে যেমন তারল্য সংকট চলছে, তেমনি বাংলাদেশ ব্যাংকেও একই সংকট দেখা দিয়েছে। এত টাকা বাইরে চলে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ যেমন কঠিন হয়ে পড়েছে, ব্যাংকগুলোর দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করাও সহজ হচ্ছে না। ফলে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ব্যাংক হিমশিম খাচ্ছে।