ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহ শহরে একমাত্র অনুমোদিত দেশীয় মদ বিক্রির ডিপো থেকে নিয়ম লঙ্ঘন করে দেদারসে মদ বিক্রি চলছে, চলতি পূজা মৌসুমে এই মদ বিক্রি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, মদ খেয়ে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, প্রকাশ্যে মাতলামী সহ পারিবারিক কলহে জড়িয়ে পড়ছে একাধিক মদ”সেবনকারী, বিস্তারিত অনুসন্ধানে প্রতিবেদক ক্রেতা সেজে সরেজমিনে গেলে ঘটনার সত্যতা পান, গোপন ক্যামেরাই রেকর্ড করা হয় নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে মদ বিক্রির দৃশ্য।
ঝিনাইদহ পুরাতন হাটখোলায় সরোজিৎ বিশ্বাসের মালিকানাধীন এই ডিপোয় চলছে রমরমা মদের ব্যবসা। অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০২২ অনুযায়ী জানা যায় কোন ব্যক্তিকে মদ ক্রয় করতে হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে বিশেষ পারমিট নিতে হয়, পারমিট ব্যতিত কোন ব্যক্তি মদ ক্রয় করতে পারবেন না এবং মদ বিক্রেতাও পারমিট না দেখালে কারো কাছে মদ বিক্রি করতে পারবে না, এই নিয়ম না মানলে এ ক্ষেত্রে উভয়ই শাস্তির আওতায় আসবে, পারমিটধারী ব্যক্তির বয়স হতে হবে সর্বনিম্ন ২১ বছর অথচ ১৬/১৭ বছরের কিশোররা দেদারসে মদ কিনছে, মদ কেনা অর্থ জোগাড় করতে জড়িয়ে পড়ছে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে।
দেশীয় মদ বিক্রির নিয়মে যা আছে-দেশীয় মদ (সিএস) মূলত অমুসলিম হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য পারমিট এর মাধ্যমে বিক্রিয় করার নিয়ম আছে, কিন্তু অমুসলিম, মুসলিম উভয়ের কাছেই মদ বিক্রি চলছে,
অনুমোদিত ব্যক্তি মাসে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ লিটার মদ কিনতে পারবেন, এতে করে একজন ব্যক্তি প্রতিদিন ৩১৬ মিলি মদ ক্রয় করতে পারবেন এবং প্রত্যেক ব্যক্তির মদ ক্রয় এর তথ্য রেজিস্ট্রার খাতায় উল্লেখ থাকতে হবে, অথচ ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, যে কোন ব্যক্তি গেলেই তাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে মদ, চাওয়া হচ্ছে না পারমিট, কেউ এক লিটার কেউ দুই লিটার যার যেরকম চাহিদা মদ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন, ডিপোর কর্মচারীদের কাছে নেই কোন রেজিস্ট্রার খাতা।
এই ব্যাপারে জানার জন্য, ঝিনাইদহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক গোলক মজুমদার নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি রসিকতা করে বলেন, আরে খাচ্ছে খেতে দেন না ” এরপর অনিয়মের ভিডিও দেখালে তিনি সিরিয়াস মুডে গিয়ে অভিযোগ গুলো একটা নোটপ্যাডে লিখে বলেন যে আমার টিম এখনই এ্যাকশান নিচ্ছে, কিন্তু তার টিম কোন এ্যাকশান নেইনি।
এই ডিপোর আন্ডারে কতজন ব্যক্তিকে মদ খাওয়ার পারমিট দেওয়া আছে জানতে চাইলে সেই তথ্য দিতে তিনি অপারগতা জানান।
তবে একটি সূত্রে জানা যায়, এই ডিপোর আন্ডারে ১২০০ ব্যক্তির পারমিট আছে, ব্যক্তি প্রতি ৩১৬ মিলি ধরা হলে সেই অনুযায়ী ডিপো মালিক প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩৮০ লিটার মদ বিক্রি করতে পারেন যা মাসিক হিসাব করলে ১১ হাজার ৪০০ লিটার হয়।
অথচ প্রতিদিন এই ডিপো থেকে ৭০০থেকে ৭৫০ লিটার মদ বিক্রি করছে, যা মাসিক হিসাবে ২১ হাজার লিটার মদ বিক্রি ছাড়িয়ে যাচ্ছে,
পারমিট এর বিপরীতে এত মদ ডিপো মালিক সরোজিৎ ক্রয় করতে পারেন কিনা জানার জন্য কেরু এন্ড কোম্পানির তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুজিবুর রহমানের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি জানিনা, সব তথ্য, তথ্য কর্মকর্তার কাছে থাকে না, তিনি কেরু’র এমডি রাব্বিক হাসান কে ফোন দিতে বলেন, এমডি রাব্বিক হাসান কে ফোন দিলে তিনি বলেন আমি কিছুই জানিনা, তিনি আরেক কর্মকর্তার নাম্বার দেন তথ্য নেবার জন্য কিন্তু সেই নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আওয়ালের নিকট বিষয়টি জানালে তিনি জানান, আপনারা ফোন করার আগেই আমি মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের এডিকে নির্দেশনা দিয়েছি যেন কোন অনিয়ম না হয় তারপরও যেহেতু ফোন করেছেন আমি আবারো বলছি।
একটি গোপনসূত্রে জানা যায়, কেরু এন্ড কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সরোজিৎ দীর্ঘদিন ধরে সরকারের নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করছেন, কেরু এন্ড কোম্পানি সম্প্রতি খোলা মদ বিক্রি নিষিদ্ধ করে দেশীয় মদ বোতলজাত করে বিক্রি করছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেরুর একজন কর্মকর্তা জানান, ২৯৫ টাকা প্রতি লিটার বোতলজাত দেশীও মদ আমরা বিক্রি করছি অথচ সরোজিৎ সেই মদ ১৬০০ টাকায় বিক্রি করছে,
এ ব্যাপারে ডিপোর মালিক সরোজিৎ এর বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার ডিপোয় গেলে তাকে পাওয়া যায়নি, তার মুঠো ফোনে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়, তার কর্মচারীরা কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
মন্তব্য করুন
Design & Developed by BD IT HOST