• Home
  • অর্থনীতি
  • গরুর বিকল্প গয়াল বেশি স্বাদ,বেশি মাংস,বেশি লাভ
Image

গরুর বিকল্প গয়াল বেশি স্বাদ,বেশি মাংস,বেশি লাভ

অভিযোগ বার্তা ডেস্কঃ

ফেনী জেলার মহিপাল থেকে শামসুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী সাতকানিয়া উপজেলার কেঁউচিয়া বাইতুল ইজ্জত এসেছেন মেজবানির জন্য গয়াল কিনতে। ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় কিনেছেনও একটি। গত বছরও তিনি আরেকটি অনুষ্ঠানের জন্য ১ লাখ ৮ হাজার টাকায় একটি গয়াল কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন। শুধু অনুষ্ঠানের জন্য নয়, ব্যবসার জন্যও তিনি গয়াল কেনেন। শামসুল ইসলাম বলেন, গরু-মহিষের চেয়ে গয়ালে মাংস পাওয়া যায় অনেক বেশি, স্বাদও চমৎকার। তাছাড়া গয়াল ভিম্নধর্মী প্রাণী, এটি এলাকায় নিয়ে গেলে দেখতে লোকজনের ভিড় জমে যায়। তাই বিক্রিও হয় ভালো দামে। তিনি সাতকানিয়া থেকে নিয়মিত গয়াল কিনে ফেনী নিয়ে যান। শামসুল ইসলাম শুধু নয়, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, নোয়াখালীর চৌমুহনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে গয়াল কিনতে আসা আরও অনেকে একই কথা বললেন। চট্টগ্রামে গরু-মহিষের মাংসের দাম বেশি হওয়ায় গয়ালের মাংসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ বাণিজ্যিকভাবে গয়াল পালনে ঝুঁকছে।

মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য পাহাড়ি গয়ালের ব্যবহার সম্পর্কে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল হক জসীম বলেন, দেশে এখন গরু-মহিষের দাম বেড়ে গেছে, পশুর দেশীয় উৎপাদনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এই সময়ে মাংসের চাহিদা পূরণে গয়ালের ব্যবহার একটি ভালো লক্ষণ। তিনি বলেন, গয়ালের ব্যবহার জনপ্রিয় হলে দেশি-বিদেশি পশুর ওপর নির্ভরতা যেমন কমে আসবে, তেমনি গয়ালের বাণিজ্যিক লালন পালনে মানুষ আকৃষ্ট হবে। গয়ালের মাংসে কোলেস্টেরল কম হওয়ায় এটি মানবদেহের জন্য সবসময় কম ঝুঁকিপূর্ণ। গয়াল শুধু দুর্বল খাবারেই লালন পালন করা হয়ে থাকে এবং এদের দেহে কোনো ধরনের কৃত্রিম ওষুধ প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে না। গয়ালের মাংস সবার জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত বলেও জানান প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

গয়াল ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় শুধু সাতকানিয়ার কেঁউচিয়ায় নয়, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া ও পটিয়ার আরও কয়েকটি স্থানে গয়াল বিক্রি হয়ে থাকে। তবে পটিয়ার চক্রশালা ও সাতকানিয়ার কেঁউচিয়ায় সারা বছরই গয়ালের কেনাবেচা চলে। শীত মৌসুম এলে বিভিন্ন স্থানে ওরস, মিলাদ মাহফিল, মেজবান উপলক্ষে গয়ালের বেচাকেনা বাড়ে।

গৃহস্থ ও ব্যবসায়ীরা জানান, একসময় গয়াল ছিল বণ্যপ্রাণী তালিকাভুক্ত। অবৈধ শিকারিরা পাহাড়ে ফাঁদ পেতে গয়াল ধরে সেগুলো গোপনে জবাই করে মাংস বিক্রি করত। পরে বনবিভাগ গয়ালকে গবাদি বা গৃহপালিত পশু হিসেবে ঘোষণা করে। তখন থেকেই অনেক উপজাতি বাড়িতে গয়াল লালন পালন শুরু করে। বর্তমানে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, থানছি, আলীকদম, বলিপাড়াসহ দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে এ পাহাড়ি পশুর লালন পালন করা হচ্ছে। উপজাতিদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা গয়াল কিনে সেগুলো সমতলের গ্রামে নিয়ে আসেন। চট্টগ্রামসহ দেশের অন্য জেলা থেকে লোকজন এসে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গয়াল কিনে নিয়ে যান। সাতকানিয়ার কেঁউচিয়া বাইতুল ইজ্জত, আমতল, বন গবেষণাকেন্দ্র ও সত্যপীর মাজারপাড়া এলাকায় বিক্রির জন্য গয়াল রাখেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক বছর আগেও হাতেগোনা কয়েকজন লোক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য গয়াল কিনতে আসত। এখন সে সংখ্যা কয়েকশ পেরিয়ে গেছে। গয়ালে গরু-মহিষের তুলনায় বেশি মাংস পাওয়া যাওয়ায় এটির ব্যবহার বেড়ে চলেছে সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে। সাম্প্রতিক সময়ে মাংসের প্রয়োজন হয় এমন অনুষ্ঠানগুলোতে গয়ালের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় গয়াল পালন লাভজনক হিসেবে দেখা দিয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে গয়াল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত জনার কেঁউচিয়া গ্রামের মোহাম্মদ ইদ্রিচ ও বাজালিয়ার নুর মোহাম্মদ বলেন, গয়াল দিয়ে মেজবান দিতে আগ্রহীদের মধ্যে বিত্তশালী লোকজনই বেশি উৎসাহী। তিনি জানান, একটা সময় ছিল বান্দরবানের বিভিম্ন এলাকার বনজঙ্গলে প্রচুর গয়াল পাওয়া যেত। তখন এগুলো বন্যগ্রাণী হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু এখন বান্দরবানের বিভিম্ন উপজেলায় উপজাতি পরিবারগুলো বাণিজ্যিকভিত্তিতে গয়াল পালন করে আসছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারে ২০-৩০টি গয়াল পালন করা হয়।

বর্তমানে সহস্রাধিক উপজাতি পরিবার সারা বছরই গয়াল পালন করে থাকে। কোনো কোনো স্থানে ইতিমধ্যে গয়ালের বাণিজ্যিক খামারও গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানান ইদ্রিচ। এসব পরিবার ও খামার থেকে ব্যবসায়ীরা গয়াল কিনে লোকালয়ে নিয়ে আসেন। গয়াল ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ বলেন, বাজারে বিক্রি হওয়া গরু-মহিষের তুলনায় গয়ালের দাম একটু বেশি হয়। কারণ গয়াল সবসময় মোটাতাজা হওয়ায় এ পশুতে মাংস বেশি পাওয়া যায়। একেকটি গয়াল ওজন ভেদে এক থেকে দেড়-দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। লোকজনের চাহিদা মোতাবেক দেশের বিভিন্ন এলাকায় গয়াল পাঠিয়ে থাকেন বলেও জানান গয়াল বেপারি নুর মোহাম্মদ।

সাম্প্রতিক সময়ে পাশের দেশ ভারত থেকে গরু আসা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশে মাংসের চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজারে গরুর মাংসের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গরু-মহিষের বিকল্প হয়ে উঠছে গয়াল।

Releated Posts

সঞ্চয় সপ্তাহ-২০২৪’ এর কার্যক্রম পরিচালনার সভা অনুষ্ঠিত

অভিযোগ বার্তা ডেস্কঃ জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের উদ্যোগে আগামী ৮- ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি. পর্যন্ত দেশব্যাপী ‘সঞ্চয় সপ্তাহ-২০২৪ উদ্‌যাপনের…

ByByFeroz Ahmedডিসে ১২, ২০২৪

এলপি গ্যাসের নতুন মূল্য ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক এলপি গ্যাসের নতুন মূল্য ঘোষণা ভোক্তাপর্যায়ে এ মাসে আর বাড়ছে-কমছে না এলপি গ্যাসের দাম। নভেম্বর মাসে…

ByByFeroz Ahmedডিসে ৫, ২০২৪

পাকিস্তান থেকে কিনলো ২৫ হাজার টন চিনি

অভিযোগ বার্তা ডেস্কঃ পাকিস্তানের কাছ থেকে ২৫ হাজার টন চিনি কিনেছে বাংলাদেশ। উচ্চ মানসম্পন্ন এই চিনি আগামী মাসেই…

ByByFeroz Ahmedডিসে ৪, ২০২৪

ডাচ্- বাংলা ব্যাংকর হোম লোনের চার সুবিধা

অভিযোগ বার্তা ডেস্কঃ পর্যাপ্ত নগদ টাকা থাকলেও বাড়ি কিনুন হোম লোন নিয়েই! জেনে নিন এর ৪টি বড় সুবিধা…

ByByFeroz Ahmedনভে ৩০, ২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Design & Developed by BD IT HOST