ইকবাল আহমেদ লিটন। –
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ শুনতেছি সেই ছোট সময় থেকেই এবং সকলেই শুনে-শুনে প্রায় অভ্যস্ত। কিন্তু ভাষণের প্রতিটি লাইনের যে গুরুত্ব, প্রতিটি শব্দের যে তাৎপর্য তা যতই পড়ছি, আলোচনা শুনছি বিমোহিত হচ্ছি। আর দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের দেশে বিদেশে -নতুন প্রজন্ম এই ভাষণটি সম্পর্কে, এর গুরুত্ব সম্পর্কে খুব কমই জানে। আসুন নতুন প্রজন্ম সহ সকলের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার করি। নিচে বিবরণ বিশদভাবে তুলে ধরা হলোঃ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতার সাথে রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশে বজ্রকণ্ঠে যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন তা ছিল মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সেই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ ১৯৭১ জাতির পিতা ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির বহুকাঙ্খিত স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে তাই ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম-আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প-২০৪১’ ঘোষণা করেছেন। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলমত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’য় পরিণত করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন। আমাদের মহান নেতার সে স্বপ্ন পূরণে আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে সকল রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের জনগণের অব্যাহত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। আজ দিবসটি স্মরণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অন্তরের- অন্তস্থল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এ দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বজ্রকণ্ঠে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন তার মধ্যে নিহিত ছিল বাঙালির মুক্তির ডাক। তাঁর অনন্যসাধারণ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে পায় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পরতে-পরতে মিশে আছে জাতির পিতার অসামান্য অবদান। মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের এই দীর্ঘ বন্ধুর পথে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম সাহস, সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সঠিক দিকনির্দেশনা জাতিকে কাক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়। বঙ্গবন্ধুর অনন্য বাগ্মিতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ভাস্বর এই ভাষণে তিনি তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বাঙালির আবেগ, স্বপ্ন ও আকাক্ষাকে একসূত্রে গেঁথে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক। ঐতিহাসিক ভাষণের সেই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ ১৯৭১ জাতির পিতা ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির বহুকাঙ্খিত স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তাই আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বাংলাদেশি জাতি সহ বিশ্বের সকল নির্যাতিত জাতির নিকট তা অপরিসীম মূল্যবান এক দলিল বা রক্ষাকবচ। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জনসভায় – বঙ্গবন্ধু -শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত এই ঐতিহাসিক ভাষণ ছিল মূলত বাঙালি সহ বিশ্বের সকল স্বাধীনতাকামিদের মূলমন্ত্র । ১৮ মিনিট স্থায়ী এই ভাষণে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সার্বিক প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। এই ঐতিহাসিক ভাষণটি বিশ্বের ১২টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়৷ এই ভাষণের ফলশ্রুতিতে বিশ্বের স্বনামধন্য পত্রিকা নিউজউইক ম্যাগাজিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজনীতির কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০১৭ সালের ৩০ শে অক্টোবর ইউনেস্কো এই ভাষণকে বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কো’র মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে নিবন্ধিত হয়েছে; এটিই প্রথম কোনো বাংলাদেশি দলিল, যা আনুষ্ঠানিক ও স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত হবে। অব দ্য ওয়ার্ল্ড-এ বর্তমানে ডকুমেন্ট ও সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৪২৭টি। লেখকঃ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা -ইকবাল আহমেদ লিটন,সদস্য সচিব ,আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগ ,ও অভিযোগ বার্তার প্রধান উপদেষ্টা সম্পাদক।