জামাল খান জেলা প্রতিনিধি।
ভোলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মো. শামসুর রহমান শুভ (২৫) নামে এক সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি দৈনিক মাতৃজগত পত্রিকার তজুমদ্দিন উপজেলা সংবাদদাতা এবং ওই উপজেলার রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য ছিলেন। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দিনগত রাতে জেলার সদর উপজেলা মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড এলাকা সংলগ্ন ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে ৯৯৯-এ কল পেয়ে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে। ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন ফকির আজ বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মৃত শামসুর রহমান শুভ তজুমদ্দিন উপজেলা সোনাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চাপরি গ্রামের মো. মোসলেউদ্দিনের ছেলে। নিহতের বাবা মোসলেউদ্দিন জানান, শুভ’র অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে মঙ্গলবার সকালে শহরের মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক জানিয়েছেন ওইদিন রাতেই তাকে সিজার করাতে হবে। সেজন্য রক্তের প্রয়োজন। রাত ৯টার দিকে শুভর এক বন্ধু তাঁর স্ত্রীকে রক্ত দিতে আসে। রক্ত দেয়া শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সে তাঁর বন্ধুকে তজুমদ্দিন উপজেলার কাজীর হাট বাজার এলাকায় মোটরসাইকেল যোগে এগিয়ে দিতে যায়। বন্ধুকে নামিয়ে দিয়ে স্ত্রীর কাছে ফিরে আসার সময় মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড এলাকা সংলগ্ন সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। শুভ’র বাবা আরও জানান, রাত ১২টায় মোবাইল ফোনে শুভর সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়। তখন শুভ জানিয়েছিল, সে বাংলাবাজার ওভার করে ভোলার দিকে আসতেছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর তিনি ও তার আত্মীয়স্বজনরা তাকে একাধিকবার ফোন করেন। কিন্তু তা রিসিভ হচ্ছে না। পরে ৯৯৯-এ কল পেয়ে ভোলা সদর মডেল থানা পুলিশ সড়কের পাশ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। শুভর চাচাতো ভাই রাসেল জানান, রক্ত সংগ্রহ হওয়ার পর চিকিৎসক তাঁর স্ত্রীকে ওটিতে নিয়ে যায়। সিজার শেষে তাঁর স্ত্রীর কোলজু্ড়ে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সন্তানকে দেখার জন্য শুভ’কে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তাঁর ফোন রিসিভ হয়নি। পরক্ষণে পুলিশ জানাল শুভ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। রাসেল আরও জানান, এখনো তাঁর অসুস্থ স্ত্রী ও সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশু কন্যা মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রয়েছে। শুভর মৃত্যুর খবর তাঁর স্ত্রীকে জানানো হয়নি। বিনা ময়নাতদন্তে বুধবার দুপুর ১টার দিকে ভোলা সদর হাসপাতাল থেকে শুভর লাশ তজুমদ্দিন উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজ আছর বাদ তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। ভোলা সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ৯৯৯-এ কল পেয়ে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করেছে। সে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছে। মোটরসাইকেলটি দুমড়েমুচড়ে তাঁর শরীরের উপর পড়েছিল। রাস্তার পাশে থাকা দেয়ালের সঙ্গে মোটরসাইকেলটির সজোরে ধাক্কা লেগেছে। রাত হওয়ায় কোনো প্রত্যক্ষদর্শী তাঁর দুর্ঘটনার বিষয়টি দেখেনি। এক পথচারী তাঁর লাশ পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে জানিয়েছে। ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন ফকির জানান, শুভর মৃত্যুতে তাঁর পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই। তাঁরা বিনা ময়নাতদন্তে লাশ নিয়ে যেতে চেয়েছে। তাই আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, অন্য কোনো যানবাহন তার মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিয়েছে নাকি বেপরোয়া গতির কারনে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।