কক্সবাজার অফিস:
লেখক:
মোহাম্মদ ইয়াসিন সিকদার।
ছাত্র ও সমাজকর্মী
“তোমার কাছে মানবতা মানে কী?
“অসহায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করো, অন্তত একজনের জন্য হলেও। তবে বিনিময়ে কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা রেখো না। আমার কাছে এটাই হলো মানবতা।
লোকে ব্যাপারটাকে খুব কঠিন করে ভাবে। আসলে তা নয়।মানুষকে সাহায্য করতে হলে হতে হয় মানবিক,থাকতে হয় মানবতা।কখন নিজেকে মানবিক মনে করবেন?তাহলে বলি,যখন আপনি অন্যের ব্যাথায় সমব্যথী হবেন,অন্যের কস্টে কস্টানুভব করবেন,অসহায় সুবিধাবঞ্চিতদের দেখলে খারাপ লাগা শুরু হবে তখন বুঝতে পারবেন আপনার মধ্যে মানবিকতা কাজ করছে,আপনার ভিতর মানবতা কাজ করছে। আমি চাই,সমাজের-রাষ্ট্রের-বিশ্বের প্রতিটি মানুষ মানবিক হয়ে উঠুক, সবাই অসহায় সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াক।আপনি আপনার পাশের অসহায় মানুষটির খোঁজ-খবর নিন, আপনার যা আছে তা দিয়ে মানুষটির পাশে দাঁড়ান।এভাবে যদি নিজ দায়িত্বে সবাই সবার পাশের সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ায় তাহলে আমাদের সমাজে-রাষ্ট্রে একটা মানুষ ও আর অসহায় থাকবেনা,সমাজের কেউ আর না খেয়ে মরবেনা,সমাজের কেউ আর খালি গায়ে থাকবেনা,থাকবেনা কোন পথশিশু,থাকবেনা কোন পথের ভিক্ষুক,পারি না কী আমরা, এমন একটা সমাজ গড়তে?এমন একটা রাষ্ট্র গড়তে?এমন একটা বিশ্ব গড়তে?অবশ্যই পারি।প্রথমেই বলেছি,এই জন্য আমাদের লাগবে মানবিক হওয়া,নিজের মধ্যে মানবতা সৃষ্টি করা।আর আমরা সবাই যেন এটা বিশ্বাস করি,মানুষের পাশে দাঁড়াতে হলে ধনী হতে হয় না। হ্যাঁ। তোমার অনেক টাকা থাকতে হবে তা নয়, তোমাকে বিখ্যাত হতে হবে তা নয়, এমনকি তোমাকে কলেজ-স্নাতক হতে হবে তা-ও নয়। ইচ্ছে থাকলেই তুমি মানুষের জন্য কাজ করতে পারো।
তুমি কাকে সাহায্য করবে? শুরু হতে পারে তোমার একজন প্রতিবেশীকে দিয়ে। ক্লাসে তোমার ঠিক পাশে বসা সহপাঠীকে সাহায্য করো, তোমার এলাকার একটা শিশুকে সাহায্য করো। তোমার সাধ্যের মধ্যে যা আছে, তা-ই করো। যদি তোমার কাছে মাত্র পাঁচ টাকাও থাকে, সেটারও অনেক ভাগীদার আছে।
মনে রেখ,হিতৈষী মনোভাব ও সহমর্মিতার গুণ ছাড়া মানবিকতা ও মহানুভবতার বিকাশ পূর্ণতা পায় না।তুমি তিনবেলা পেট পুরে খেতে পার। একাধিক পদের তরকারি ছাড়া তোমার খাবার রোচে না। বিচিত্র স্বাদ আস্বাদন ছাড়া আমার রসনা তৃপ্ত হয় না।তোমার পোষা কুকুরকে নিত্য টাটকা গোশত খাওয়াই। দুই বেলা শাহী খাবার খেতে দাও। শ্যাম্পু ছাড়া ওর গোসল হয় না। অথচ তোমার পাশের বস্তিতে খাবার না পেয়ে অবোধ শিশুরা চিৎকার করে কাঁদে। খোদার জ্বালা সইতে না পেরে কত মানুষ পথের ধারে উপুড় হয়ে কাতরায়। ফল-ফ্রুটস খেতে খেতে তোমার অরুচি ধরে যায়। অথচ বাড়ির বুয়ার অভুক্ত সন্তানদের মুখে মৌসুমী ফলটি পর্যন্ত ওঠে না। ক্ষুদে মাছির ছোট্ট পায়ের ভার পড়ামাত্র সুডৌল আপেল, রসে টইটুম্বর আঙ্গুর ও টসটসে কমলা তোমরা প্রায়শই নিক্ষেপ করো ডাস্টবিনে। অথচ ওরা পঁচা ও উচ্ছিষ্ট ফল খাওয়ার জন্য ইতর প্রাণীর সঙ্গে যুদ্ধ করে ডাস্টবিনে। ফ্যাশন বদলের সঙ্গে সঙ্গেই তোমার শীতবস্ত্র আর গ্রীষ্মের পোশাক বদল হয়। অথচ অদূরের গাঁয়ে/বস্তিতেই কি-না শীতবস্ত্রের অভাবে গরীবের প্রাণ যায়।
এসব তো বিবেক বা মানবতার পরিচায়ক নয়। অমানবের চেয়ে মানব শ্রেষ্ঠ কেন? প্রাণের কারণে? কেবল বুদ্ধির কারণে? মোটেও না। প্রাণের বৈশিষ্ট্যে মানুষ ও জীব-জন্তু প্রায় অভিন্ন। মানুষ বুদ্ধিমান জীব বলে অন্য সব জীবজন্তু একেবারে বুদ্ধিহীন নয়। বরং বুদ্ধির সঙ্গে বিবেক এবং আপন চাহিদার সঙ্গে মানবিকতার সংশ্লেষই অন্য সব জীব-জন্তুর ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছে। যদি আমরা সবাই মানবিক হই তাহলে সমাজে এমন বৈষম্য ও প্রভেদের কোনো সুযোগ থাকবেনা।আসুন সবাই মানবিকতা, পরহিতৈষণা, সহমর্মিতা ও মহানুভবতার শিক্ষা নিয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থে, অসহায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়,নিজে মানবিক হই,নিজের মধ্যে মানবতা সৃষ্টি করি।দেখবেন আপনাকে দেখে আপনার আশেপাশের অনেকে মানবিক হয়ে উঠবে।এবং সবাই মিলে স্বপ্নের মানবিক সোনার বাংলা বিনির্মান করতে পারব।
আসুন স্বপ্নের মানবিক সোনার বাংলা বিনির্মানের জন্য শপথ করি,
“আজ থেকে মানবিক হয়ে উঠব”।
সহমর্মিতা ও মহানুভবতার শিক্ষা নিয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করব”।
নিজের মধ্যে সবসময় পরহিতৈষী মনোভাব পোষণ করব।
সুবিধাবঞ্চিত’র পাশে দাঁড়াব।
নিজে মানবিক হব,অপরকে মানবিক হওয়ার শিক্ষা দিব”।