প্রতিনিধি ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৫:৫৪:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা এলাকার কয়েকটি গাছি পরিবার এই গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক সময় হাজারি গুড়ের সুনাম এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রতিবছর জেলায় শীত মৌসুমে খেজুর গাছ একটা শিল্পে পরিণত হয়। রস-গুড় উৎপাদনে পেশাদার গাছি, কুমার, কামার, জ্বালানি ব্যবসায়ী, পরিবহনের জন্য ট্রাক মালিক, চালক, ভ্যান চালক, শ্রমিক আড়তদারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এতে যুক্ত থাকে। হাজারি গুড় নিয়ে প্রচলিত উপকথা গুড়ের নাম কেন হাজারি গুড় এ ব্যাপারে জনশ্রুতিতে দুটি গল্প প্রচলিত আছে। এর মধ্যে একটি দৈবশক্তিসম্পন্ন কোনো এক দরবেশ ও অন্যটি রানি এলিজাবেথকে ঘিরে। কয়েকশ বছর আগে ঝিটকা অঞ্চলে মোহাম্মদ হাজারি নামে একজন গাছি ছিলেন। যিনি খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করতেন। হঠাৎ একদিন বিকেলে খেজুর গাছে হাঁড়ি বসিয়ে গাছ থেকে নামামাত্রই একজন দরবেশ তার কাছ রস খেতে চান। তখন ওই গাছি দরবেশকে বলেছিলেন, ‘সবে মাত্র গাছ হাঁড়ি বসানো হয়েছে। এতো অল্প সময়ে বড় জোর ১০-১৫ ফোঁটা রস হাঁড়িতে পড়েছে। তবুও দরবেশ তাকে গাছে উঠে হাঁড়ি থেকে রস খাওয়ানোর অনুরোধ জানান। দরবেশের রস খাওয়ার অনুরোধে গাছি আবার খেজুর গাছে ওঠেন। এরপর বিস্মিত হয়ে দেখতে পান, সারারাত ধরে যতো রস পড়তো সে পরিমাণ রসে হাঁড়ি ভরে গেছে। গাছি হাঁড়ি ভরপুর রস নিয়ে নিচে নেমে ওই দরবেশকে রস খাওয়ান এবং পা জড়িয়ে ধরেন। গাছিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে দরবেশ বলেন, ‘কাল থেকে তুই যে গুড় তৈরি করবি তা সবাই খাবে এবং তোর গুড়ের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে। তোর সাত পুরুষ এ গুড়ের সুনাম ধরে রাখবে’ বলেই দরবেশ দ্রুত চলে যান। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ওই দরবেশকে পাওয়া যায়নি। ওই দিন থেকেই মোহাম্মদ হাজারি নামেই এ গুড়ের ‘হাজারি’ নামকরণ করা হয়। অন্য গল্পটি হলো, ব্রিটিশ আমলে রানি এলিজাবেথ ভারতবর্ষ সফরে এসেছিলেন। তার খাবার টেবিলে দেওয়া হয়েছিল এই গুড়। রানি গুড় হাতে নিয়ে একটু চাপ দিতেই হাজার টুকরো হয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে এটি হাজারি গুড় নামে পরিচিত। রানি এলিজাবেথ গুড় খেয়ে এতই মজা পেয়েছিলেন যে, তিনি নিজে আগ্রহী হয়ে ‘হাজারি’ নামে একটি সিলমোহর তৈরি করে দিয়ে গেছেন। সেই সিলমোহরটি এখন জাহিদ হাজারির কাছে রয়েছে। আর তাই হাজারী গুড় কে মানিকগঞ্জ জেলার ব্রান্ড হিসাবে পরিচিত করতে শুরু হয়েছে জেলায় তিন ব্যাপী হাজারী গুড়ের মেলা।
Design & Developed by BD IT HOST