
সুনাামগন্জ থেকে আনোয়ার হোসাইনঃ
দিরাই-শাল্লা প্রতিনিধি::- স্বামীর পরিবারের লোকজন বিভিন্নভাবে তার বোনকে নির্যাতন করতো। তার স্বামীও প্রবাসে থেকে তার সাথে মোবাইলে ঝগড়া করতো। তারপর আমরা তাদেরকে বুঝিয়েছি এগুলো না-করার জন্য। বিয়ের পর থেকেই যৌতুক হিসেবে আমাদের কাছে হোন্ডা চাইতো। আমরা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছি। এতে আমাদের উপর তার বোন জামাই পরিবারের লোকজন বিরক্ত ছিল। তার শশুর-শাশুড়ি তাকে অত্যাচার করতো। তার দেবর সুমন মিয়াও তাকে মারধর করতো।মাসখানেক আগে আমার বোন আমাদের বাড়িতে চলে আসছিল। পরে সে তার স্বামীর বাড়িতে আর যেতে চাইছিল না। পরে তার শশুর এসে অনেক অনুরোধ করে তাকে আবারো নিয়ে যায়। গতকালও তার শশুর,ভাসুর ও তার দেবর তাকে মারধর করেছে। মারধর করার পর তাকে বিষ খাইয়ে দিয়েছে। তারা মারার পর ফোন দিয়ে আমাদেরকে জানাইছে সে বিষপান করেছে। প্রকৃত পক্ষে বিয়ের পর থেকেই তারা তার বোনকে এরকম অত্যাচার করতো। তার বোনকে পরিকল্পিত ভাবে মারা হয়েছে। আমার বোনের এরকম পরিণতি হবে তিনি কখন ভাবেন নি! প্রথমে আমার বোনকে মার্কুলি বাজারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারপর বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যেই সে মারা যায়। হাসপাতালে পৌঁছার পরেই ডাক্তার থাকে মৃত ঘোষণা করেন।
একথাগুলো বলছিলেন স্বামীর বাড়ির লোকজনের শারীরিক নির্যাতনে নিহত গৃহবধূর স্বপ্না আক্তারের (২০) আপন ভাই আমির হামজা। সুনামগঞ্জের শাল্লায় পারিবারিক কলহের দ্বন্দ্বে ওই গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। উপজেলার ২নং হবিবপুর ইউনিয়নের ভরাউট গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায় স্বপ্না আক্তার ও তার ওমান প্রবাসী স্বামী আক্তার হোসেনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মোবাইলে প্রায়ই ঝগড়া হতো। তার বোনকে খুন করা হয়েছে দাবি করে স্বপ্না আক্তারের ভাই আমির হামজা বলেন গতকাল (২২ সেপ্টেম্বর) রবিবার শশুর সায়েদ আলি,ভাসুর হারুন মিয়া,দেবর,সুমন মিয়া ও তার শাশুড়ি মিলে তাকে মারধর করে শারীরিকভাবে অত্যাচার করে। একপর্যায়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ওই তার বোন স্বপ্না আক্তারের মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে বলে এলাকায় প্রচার দিচ্ছেন গৃহবধূর স্বামীপক্ষ।
আজ আবারো আমির হামজার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতালে লাশের ময়না তদন্ত করে লাশ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন পরে আমরা আইনের দারস্থ হবো। এদিকে হবিবপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য সামিজুল মিয়া বলেন ঘটনা শোনার পরই আমি মার্কুলি বাজারে যাই। নিহত ব্যক্তির শশুরবাড়ির লোকজনকে বলি তারা যেন সাথে গিয়ে মহিলাকে উন্নতি চিকিৎসা করায়। তিনি বলেন নিহত গৃহবধূর পরিবারের লোকজনকে দেখে মনে হয়েছে তারা খুবই ভাল ও ভদ্র মানুষ। কিন্তু স্বামী পক্ষের লোকজন তাদেরকে সহযোগিতা না করে এটা ঠিক করেননি।
এদিকে গৃহবধূর শশুর সায়েদ আলীর সাথে কথা হলে তার ছেলে আক্তার হোসেন ও তার পুত্রবধূর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন,আমি বাড়িতে নেই। পাশ্ববর্তী মুরাদপুর গ্রামে তিনি তার বিয়াই বাড়িতে রয়েছেন। তিনি বলেন আমি আমার ছেলে থেকে পৃথক। আমাকে যদি মামলাও দেওয়া হয় তাহলে কিচ্ছু করার নাই। আর না দিলে আলহামদুলিল্লাহ। তবে তার পুত্রবধুকে মারধরের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি বলেন তার পুত্রবধু বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে। বিষপান কেন করেছে এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি সায়েদ আলী। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে,ঘটনার পর থেকেই স্বামী পক্ষের লোকজন পলাতক রয়েছেন। বাড়িতে শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে বলে জানা যায়।
হবিবপুর ইউনিয়নের বিট অফিসার (এসআই) আব্দুল জলিল বলেন স্থানীয়রা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। সাথে সাথে চিকিৎসার জন্য তারা অন্য এরিয়ায় চলে যাওয়ায় আমরা আর সেখানে যাইনি। তবে তারা যদি আইনের দারস্থ হতে চায় তদন্ত সাপেক্ষে আমরা তাদেরকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।
তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ আহমদ হোসেন বলেন,ঘটনার খোঁজখবর নিচ্ছি। তারপর বিস্তারিত বলতে পারবো।
মন্তব্য করুন
Design & Developed by BD IT HOST