অভিযোগ বার্তা ডেস্কঃ
মুক্তিকামী বাঙালির আন্দোলন কঠোর হাতে দমনের জন্য একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সূচনা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী, ভয়াবহ সেই নৃশংসতায় শহীদদের স্মরণে পালিত হচ্ছে গণহত্যা দিবস।
সেই কাল রাতে চালানো অপারেশন সার্চলাইটের বীভৎসতার ওপর দাঁড়িয়ে মুক্তির যে যুদ্ধ শুরু করে বাঙালি জাতি, তার পথ ধরে নয় মাস পার বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
নানা আয়োজনে মঙ্গলবার সেই রাতের শহীদদের বিনম্রচিত্তে স্মরণ করবে জাতি; হত্যাযজ্ঞের যেই দিনটি জাতীয়ভাবে স্বীকৃত ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে।তেইশ বছরের শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে ঢাকায় চালানো হয় ব্যাপক গণহত্যা।
এ অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকাসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান শহরগুলোতে আওয়ামী লীগ নেতা ও ছাত্র নেতৃবৃন্দ এবং বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের গ্রেপ্তার ও হত্যা; সামরিক আধা সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের নিরস্ত্রীকরণ; অস্ত্রাগার, রেডিও ও টেলিফোন এক্সচেঞ্জ দখলসহ প্রদেশের সামগ্রিক কর্তৃত্ব গ্রহণ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করে প্রদেশে পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
জাতীয় নির্বাচনের পর সরকার গঠন নিয়ে পাকিস্তানের দুই অংশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের দুই নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর আলোচনার মধ্যেই ফেব্রুয়ারি থেকে অপারেশনের ছক কষে পাকিস্তানি বাহিনী, যা চূড়ান্ত হয় মার্চের ১৭ তারিখে এসে।
সিদ্ধান্ত হয়, ২৫ মার্চ রাত ১টায় অপারেশন সার্চলাইটের আওতায় ঢাকায় অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন পাকিস্তানি বাহিনীর ৫৭ ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে নেতৃত্ব দেবেন ১৪ ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম রাজা।পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ১০টার দিকে ঢাকা সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনীর একটি বড় কনভয় যুদ্ধ সাজে শহরের দিকে রওনা হয়।
শহরমুখী সেনাবাহিনীর মেকানিক্যাল কলামটি প্রথম প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় ফার্মগেইটে। সেখানে বড় বড় গাছের গুঁড়ি, অকেজো স্টিম রোলার এবং ভাঙা গাড়ির স্তূপ জমিয়ে রাখা হয়েছিল পথ আটকানোর জন্য। মুক্তিকামী বেপরোয়া প্রতিরোধোন্মুখ জনতার মাঝ থেকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উঠছিল।গুলি করে এ প্রতিরোধ ভেঙে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ট্যাংকগুলো সামনে এগিয়ে যায়। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ রেসকোর্স ময়দানের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সেনাবাহিনীর অন্তত ৮০টি সাঁজোয়া যানকে পূর্ণ যুদ্ধপ্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
রাত ১১টা ২০ মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি অংশ রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের চারিদিকে অবস্থান নিতে শুরু করে। এ আক্রমণের সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে দেশের জেলা ও সাব ডিভিশনে বেতার বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
রাত সাড়ে ১১টার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়ক কর্নেল তাজের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাদের কনভয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আক্রমণ শুরু করে।ব্যারাকে অবস্থানরত বাঙালি পুলিশ সদস্যরা সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি করে।
একই সময়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২২তম বালুচ রেজিমেন্টের সেনারা পিলখানায় ইপিআর-এর ওপর হামলা করে। ব্যারাকে থাকা বাঙালি সেনারা চরম সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেন।
পিলখানা ইপিআর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনস আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,শাঁখারি বাজারসহ সমগ্র ঢাকায় শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ;বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় রাতের অন্ধকারে গুলি,বোমা আর ট্যাংকের আওয়াজে প্রকম্পিত হয় পুরো শহর।সেনাবাহিনী সেই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস,শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, এবং বস্তিবাসীর ওপর নজিরবিহীন নৃশংসতা চালায়।
আজ ভয়াল ২৫ শে মার্চের কালো রাতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০ টা ৩১ মিনিট জরুরি স্থাপনা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল জায়গায় এক মিনিট ‘ব্লাক-আউট’ কর্মসূচি পালন করা হবে।
এছাড়া মঙ্গলবার জোহর নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হবে। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে হবে বিশেষ প্রার্থনা।
মন্তব্য করুন
Design & Developed by BD IT HOST