
অভিযোগ বার্তা ডেস্কঃ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন (২৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এক চাঞ্চল্যকর ‘ত্রিভুজ প্রেমের’ বিবরণ দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। প্রেমের সম্পর্কের জেরে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। এই ঘটনায় নিহত জোবায়েদকে মৃত্যুর মুখেও সাহায্য করতে অস্বীকার করেছেন তারই টিউশন ছাত্রী ও দ্বৈত প্রেমিকা বার্জিস শাবনাম বর্ষা (১৮)। ডিএমপি জানিয়েছে, ঘটনার দিন গুরুতর আহত জোবায়েদ যখন বাঁচতে আকুতি জানান, তখন বর্ষা নির্দ্বিধায় বলেন, “তুমি না মরলে আমি মাহিরের হবো না।”
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এই হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইতোমধ্যে বর্ষা, তার প্রেমিক মাহির রহমান (১৯) এবং বন্ধু ফারদিন আহম্মেদ আয়লানকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, নিহত জোবায়েদ হোসেন জবি’র পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং বংশাল এলাকায় টিউশনি করাতেন। টিউশন ছাত্রী বর্ষার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে বর্ষার সঙ্গে মাহির রহমানের প্রায় দেড় বছর বা কিছু তথ্য মতে ৯ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বর্ষা একইসঙ্গে জোবায়েদ ও মাহিরের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, মাহির যখন এই দ্বৈত সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন, তখন বর্ষা তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “জোবায়েদকে না সরালে আমি তোমার কাছে ফিরতে পারবো না।” এরপর মাহির ও বর্ষা প্রায় এক মাস আগে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর, জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৯ অক্টোবর বিকেল ৪টার দিকে জোবায়েদ টিউশন পড়াতে এলে বর্ষার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মাহির ও তার বন্ধু আয়লান বাসার নিচের গলিতে অবস্থান নেন। জোবায়েদ পৌঁছালে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে মাহির ছুরি দিয়ে জোবায়েদের গলায় আঘাত করেন।
লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি ব্রিফিংয়ে সেই মুহূর্তের নির্মমতা বর্ণনা করে বলেন, “ছুরিকাঘাতের পর জোবায়েদ গুরুতর আহত অবস্থায় বাঁচার জন্য সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠেন। তিনি একাধিক দরজায় নক করলেও কেউ দরজা খোলেননি। তৃতীয় তলায় বর্ষার ফ্ল্যাটের সামনে পৌঁছে তিনি তাকে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানান। কিন্তু বর্ষা তাকে সাহায্য করতে অস্বীকার করেন এবং বলেন, ‘তুমি না মরলে আমি মাহিরের হবো না।'” অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ঘটনাস্থলেই জোবায়েদের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় নিহত জোবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বাদী হয়ে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বংশাল থানায় মাহির, বর্ষা এবং আয়লানসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
দেশের মানুষ এই ঘটনায় বরগুনার আলোচিত মিন্নি-রিফাত হত্যাকাণ্ডের ছায়া দেখতে পাচ্ছে। এই নির্মমতা সমাজে নারীর ভূমিকা এবং নৈতিকতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলেছে।
মন্তব্য করুন
Design & Developed by BD IT HOST