ইয়াছিন আলী খান
পাপে হৃদয় কলুষিত হয়, কলবে ধরে জং, নষ্ট করে মানসিক প্রশান্তি, বাড়ায় হতাশা, বিষণ্নতা ও হাজারও দুর্ভাবনা।
কেন এমন হয়? নবীজি ইরশাদ করেন, বান্দা যখন পাপ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। অতঃপর সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে আরো দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এভাবে তার পুরো অন্তর কালো দাগে ঢেকে যায়। (তিরমিজি: ৩৩৩৪)
কলব থেকে পাপের কালিমা দূর করার অন্যতম মাধ্যম হলো জিকির। জিকির মানুষের কলবকে করে পরিষ্কার এবং তাজা। দূর করে মানসিক বিষন্নতা ও পেরেশানি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন, জেনে রাখ, জিকিরের মাধ্যমে মন শীতল এবং প্রশান্ত হয়। (সূরা রা’দ: ২৮)
প্রতাপশালী এবং ওপর মহলের একটু সুদৃষ্টি পাওয়ার জন্য মানুষ হরেক রকম চেষ্টা তদবির করে। অথচ তেমন কোন কষ্ট ছাড়াই জিকিরের মাধ্যমে মহাপ্রতাপশালী এবং সর্বশক্তিমানের নৈকট্য অর্জন করা যায়।
নবীজি ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, বান্দা যখন আমার জিকির করে তখন আমি তার সাথে থাকি। বান্দা যদি আমাকে মনে মনে স্মরণ করে আমিও তাকে অন্তরে স্মরণ করি। বান্দা কোনো মজলিসে আমার কথা আলোচনা করলে আমি তার চেয়ে উত্তম মজলিসে তার আলোচনা করি। (সহীহ মুসলিম: ২৬৭৫)
এছাড়া কুরআনে পাকে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমিও তোমাদের স্মরণ করব। (সূরা বাকারা: ১৫২)
কেয়ামতের ভয়াবহতার কথা কমবেশি সবাই জানে। কঠিন সেই দিনে আরশের ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবেন। সেই বিপদক্ষনে যিকিরকারী ব্যক্তিরা আরশের শীতল ছায়াতলে ঠাঁই পাবে। নবীজি ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। তাদের একজন হলো, যে নিরিবিলি আল্লাহর জিকির করেছে এবং চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়েছে। (সহীহ বুখারী: ৬৪৭৯)
নবীজিকে একজন সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইসলামের বিধান তো অনেক। আমাকে এমন একটি বিষয় বলে দিন যার উপর আমি সর্বদা আমল করতে পারি। নবীজি বললেন, তোমার জিহবাকে আল্লাহর জিকিরে তরতাজা রাখ। (জামে তিরমিযী:৩৩৭৫)
অপর এক হাদিসে নবীজি ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, বান্দা যতক্ষণ আমাকে স্মরণ করতে থাকে এবং আমার যিকিরের কারণে তার ঠোঁট নড়তে থাকে, ততক্ষণ আমি তার সাথে থাকি। অর্থাৎ আল্লাহর রহমত তার সাথে থাকে। (ইবনে মাজাহ- ৩৭৯২)
জিকিরের মজলিস অন্যসব মজলিস থেকে শ্রেষ্ঠ। ইবাদতের মজলিস আল্লাহর রহমত চাদরে আবৃত থাকে। নবীজির ইরশাদ করেন, যখন মানুষ আল্লাহর জিকির করে তখন ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখেন, আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয় এবং তাদের উপর সাকিনা নাযিল হয়, আর আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের সামনে তাদের কথা আলোচনা করেন। (সহীহ মুসলিম: ৭০০)
কোন জিকির আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়? আমরা বেশি বেশি কোন জিকির করব?
নবীজি ইরশাদ করেন, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহ আকবার এই চারটি জিকির আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়। সহীহ বুখারী-৬৩০২
নবীজি বলেন, জান্নাতে প্রবেশ করার পর জান্নাতিরা দুনিয়ার কোনো জিনিসের জন্য আফসোস করবে না, শুধু এসময়টুকুর জন্য আফসোস করবে যা দুনিয়াতে আল্লাহর যিকির ছাড়া অতিবাহিত হয়েছে। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস: ১৬৭৪৬)
অতি উপকারী ও দামী জিনিসের কদরও করতে হয় বেশি। না হয় এর দ্বারাই ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। তাই অতীব ফজিলতপূর্ণ জিকির থেকে বিমুখতার পরিণতিও খুব কঠিন।
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে আল্লাহ তার জন্য শয়তান নিয়োজিত করে দেই। অতঃপর সে তার সঙ্গী হয়। আর শয়তান মানুষকে সৎ পথে বাধা দান করে অথচ মানুষ মনে করে যে সে সৎ পথেই আছে। (সূরা যুখরুফ-৩৬)
কুরআনের অন্যত্র ঘোষিত হয়েছে, যে আল্লাহর জিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার জীবিকা সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠানো হবে। (সূরা তহা-১২৫)
আসুন কুরআন তেলাওয়াত, ফরজ নফলসহ বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর জিকিরে মনোযোগী হই। মনকে করি সজীব ও প্রশান্ত। জীবনে আনি প্রফুল্লতা ও সুখ। সিক্ত হই বরের রহমত শিশিরে। দূর করি সব মানসিক দুর্ভাবনা।