
আনোয়া হোসাইন-শাল্লাঃ
সুনামগঞ্জের শাল্লায় দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ বিহীন মানবেতর জীবনযাপন করছেন চারটি গ্রামের অন্তত ৬’শ পরিবার। রহিম আফরোজ ও পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের বোঝাপড়ার বেড়াজালে এই এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া থেকে দূরে রয়েছে কতৃপক্ষ পক্ষ। ওই এলাকার উপর দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ খুঁটি টাঙানো হলেও এই চারটি গ্রামকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কিন্তু এবার হবিবপুর ইউনিয়নের শাসখাই, মৌরাপুর, আগুয়াই, বিলপুর এই গ্রামসহ শাসখাই বাজারে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের জন্য লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
(২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার) সিনিয়র সচিব পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়,চেয়ারম্যান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড,জেনারেল ম্যানেজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সুনামগঞ্জ,নির্বাহি প্রকৌশলী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ, এজিএম সাব- জোনাল অফিস শাল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে এ নোটিশ পাঠান তিনি।
নোটিশে বলা হয়েছে, শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের শাসখাই, মৌরাপুর, আগুয়াই, বিলপুর গ্রাম সহ ১টি বাজারে সাধারণ মানুষের জীবন মান উন্নয়নে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রাহনের জন্য নোটিশ গ্রহিতাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিনিত অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যতায় আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
জানাযায়,সরকারের প্রায় ৩২কোটি টাকা মূল্যের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি আরো পাঁচ বছরের আগেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। দুই বছর হয় ওই প্রকল্পটি একেবারে বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় বিপাকে পড়েছে উপজেলার ২নং হবিবপুর ইউনিয়নের চারটি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবারের মানুষ। তিন বছরের বেশি সময় ধরে এসব গ্রামের মানুষ বিদ্যুতহীন অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনযাপন করছেন। সাম্প্রতিক কালের গরমে এই গ্রামগুলোর মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। কষ্ট দূর করতে নানা জায়গায় ধরনা দিয়েও লাভ হচ্ছে না তাদের। অথচ পল্লী বিদ্যুতের ঘোষণা অনুযায়ী শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা শাল্লা। প্রকল্পের তথ্যনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের বৃহত্তম সৌর সোলার বিদ্যুৎ স্টেশনটি পাঁচ বছরেই অঘোষিত পরিত্যক্ত। ২০২২ সালের বন্যায় এই প্রকল্পের বিদ্যুৎ সরবরাহের খুঁটিসহ অনেক কিছুই ভেসে গেছে,যন্ত্রাংশ হয়েছে বিনষ্ট। এরপর ওই প্রকল্প আর মানুষের কোন কাজে লাগেনি। এই অবস্থায় শাল্লার ৪ গ্রামের মানুষ প্রচণ্ড খরতাপে পুড়ছে। কিন্তু তাদের এই কষ্টের বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
গ্রাহকদের অনেকে সৌর সোলার ছেড়ে পল্লী বিদ্যুতে সংযোগ পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করেন। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষও তাদের ফিরিয়ে দেয়। পল্লী বিদ্যুৎ জানিয়ে দেয়, যেহেতু প্রকল্পটি পিডিবি’র তারাই এই গ্রাহকদের সমস্যার সমাধান দিতে হবে। এরপর ২০২০ সালের আট অক্টোবর গ্রামবাসীর উদ্যােগে চারশো মানুষের স্বাক্ষরসহ এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করে জানায়, তারা পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নিতে চায়। এই প্রকল্প থেকে মুক্তি দেওয়া হোক তাদের। তাতেও কোন কাজ হয় নি।
এরপর থেকে নানা জায়গায় ধরণা দিয়েও কোন ফল পান নি ভাটি এলাকার সুবিধাবঞ্চিত কয়েক হাজার মানুষ।২০২২ সালের প্রলংকরী বন্যার সময় ডুবে যায় এই প্রকল্পের অনেক স্থাপনা। সরবরাহ লাইনের শতাধিক খুঁটি ভেঙে যায়, ভেসে যায়। বন্যার পর আর বিদ্যুৎ দেখেন নি ওই এলাকার মানুষ। অতচ এই অবস্থায় ৪ টি গ্রাম রেখেই ২০২২ শেষের দিকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত ঘোষণা দেওয়া হয় শাল্লাকে।
প্রসঙ্গত:শাসখাই সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বন্যায় ছিন্নবিচ্ছিন্ন,বিদ্যুতের সংযোগ ও খুঁটি লাইন।বন্যার আগে কোনরকমে ২-৩ ঘন্টা বিদ্যুৎ পেলেও বন্যার কবলে পরে এই প্রকল্পটি কোন কাজে আসছে না এলাকাবাসীর। এতে শাসখাই, মৌরাপুর, আগুয়াই, দত্তপাড়া ও বিলপুর এই পাঁচটি গ্রামের লোকজন একেবারে অন্ধকারেই জীবনযাপন করছেন।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ও বন মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
৪০০ কিঃও প্রায় ৩২ কোটি টাকার এই বিদুৎ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে তারপর ২০১৭ সালের ১০ ই ডিসেম্বর উদ্ভোদন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এত টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিদুৎ পেয়েও সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। ঠিকমতো বিল না নেওয়ায় গ্রাহকদের কাছে জমা হয়েছিল মোটা অংকের বিল। এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান কিন্তু দেখভাল করার জন্য মাত্র একজন লোক নিযুক্ত ছিল।তাও আবার ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারতো না বলে অভিযোগ করেছিল গ্রাহকরা। বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে অকেজো রয়েছে সৌর সোলারের এই প্রকল্পটি।
মন্তব্য করুন
Design & Developed by BD IT HOST