মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
মানিকগঞ্জ: আওয়ামীলীগের ভোলঈদ পাল্টে বিএনপি বনে যাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিন গাঁ ঢাকা দিয়ে থাকা মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. জামাল উদ্দিনের (৩৬) বিরুদ্ধে। পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আওয়ামী পন্থী নার্স হয়ে ‘বিএনএ’ মাকিনগঞ্জ জেলা কমিটির নির্বাচন করে আওয়ামী নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে সাংগঠনিরক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) নির্বাচনে মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন এই জামাল উদ্দিন। তবে তার পেশাগত জীবন এবং বিএনএ নির্বাচন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার আশীর্বাদস্বরূপ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনএর নির্বাচিত নেতৃবৃন্দরাই। এ নিয়ে হাসপাতাল অঙ্গন এবং নার্সদের মাঝে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
জানাগেছে, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আত্নীয় পরিচয়ে ২০১৬ সালে জেলা সদর হাসপাতালে নার্স হিসেবে যোগদান করেন জামাল উদ্দিন। এরপর জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মজিদ ফটোর সাথে রাজনীতিতে তার অভিষেক। এরপর ২০২০ সালে সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নির্দেশে তার নিজ এলাকায় অবস্থিত মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে যোগদান করেন। এরপরই নার্সদের সংগঠন বিএনএর সাংগঠনিক সম্পাদক পদে স্থান হয় তার।৪সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও চাচাতো ভাই ইস্রাফিস হোসেনের বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড হিসেবে হাসপাতাল এলাকায় নানা অনিয়ম-দুনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে নার্সদের আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট হাসপাতালের মেশিনপত্র কেনাকাটা, মেনটেনেন্স এবং ঔষধপত্র কারচুপির সাথে জড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি অনুসারী নার্সদের ডিউটি তোদবিরতা চালিয়ে ভিন্ন মতাদর্শের নার্সদের অতিরিক্ত ডিউটি করতে বাধ্য করান। হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারের ভিতর ব্যক্তিগত রুম বানিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপের একাধিক অভিযোগ ওঠে তার নামে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী ওটি বিভাগের এক নার্স অভিযোগ করে বলেন, ২০২২ সালে নার্স জামাল উদ্দিন আমার সাথে চাকচ্যুতির ভয় দেখিয়ে অসামাজিক কাজ করে। এঘটনা আমাদের সহকর্মীদের মাঝে জানাজানি হলে আমাকে মুখ খুললে নানা ধরণের ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে। আমার বিয়ের পরও পুনরায় চারকির ভয় দেখিয়ে আমাকে অসামাজিক কার্যকলাপ করতে বললে আমার স্বামীকে বিষয়টি জানালে তিনি আমার স্বামীর সাথে অসদ আচরণ করে। এই ঘটনার কেন্দ্র ধরে আমার স্বামীর সাথে আমার বিচ্ছেদ হয়। তার কথা না শোনার কারণে কর্মস্থলে আমাকে অতিরিক্ত চাপে রাখে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের আটতলা নতুন ভবনে বিভিন্ন ফ্লোরে এবং মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জেলা বিএনপির আহবায়ক আফরোজা খান রিতার ছবি ব্যবহার করে পোস্টার দেয়ালে লাগানো হয়েছে। বিএনএ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে হাসপাতালের প্রতিটা ফ্লেরে পোষ্টারে নার্সদের শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।
এবিষয়ে জেলা নার্সেস এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর দীর্ঘ দিন পলাতক থাকার পর এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী প্যানেলের ভোট এবং অনিয়ম করে কমিটিতে এসেছে। আওয়ামীলীগ সরকারের সময় আমাদের নার্স ভাই-বোনদের নানা জুলুম, অত্যাচার করেছে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘণিষ্ঠ হিসেবে হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্ণীতির সাথে জরিয়ে আওয়ামীগ নেতাদের সুবিধা দিয়েছে। এখন ভোল পাল্টে জেলা বিএপির আহবায়ক ও সাবেক জেলা বিএপির সভাপতি আফরোজা খান রিতার ছবি ব্যবহার করে বিএনপি পরিচয়ে পরিচিত হতে চাচ্ছে। মূলত তিনি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি হালাল করতে চান।মুঠোফোনে যোগাগোগ করা হলে অভিযোগের বিষয়গুলো শুনে সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলার এখতিয়ার তার নেই জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন জামাল উদ্দিন।
মন্তব্য করুন
Design & Developed by BD IT HOST