
নিউজ ডেস্কঃ
সুলতান চুন্নু যার ইন্দিরা রোডের লেগুনা স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণে বছরে চাঁদা নেন ৭ কোটি,গ্লোব সেন্টারে ৮০০ স্কয়ার ফিটের দুটি ফ্ল্যাট ও একটি দোকান
রাজধানী ও কিশোরগঞ্জে একাধিক ফ্ল্যাট, বাড়ি ও দোকান
এক সময় ছিলেন রাজমিস্ত্রির কর্মচারী, তারপর রিকশাচালক। গার্মেন্টসকর্মী স্ত্রী নাসরিন বেগমকে নিয়ে বসবাস করতেন মিরপুরের তালতলা বস্তিতে। ওই সময় ঢাকায় যার মাথাগোঁজার ঠাঁই ছিল না, তিনিই মাত্র ২০ বছরের ব্যবধানে হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ফার্মগেটের মতো এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, গাড়ি ও দোকানের মালিক তিনি। গ্রামে গড়েছেন আলিশান দুটি বাড়ি। টাকা কামাতে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দল গড়েন। কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও বিজয় সরণি এলাকায় দাপটের সঙ্গে চালিয়ে যান ছিনতাই কার্যক্রম। ইন্দিরা রোডের ফুটপাত ও লেগুনা স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণও নেন এজন্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের আশীর্বাদপুষ্ট স্থানীয় কাউন্সিলর ইরানের ছত্রছায়ায় শুরু করেন শ্রমিক লীগের রাজনীতি। দলীয় পদ না থাকলেও এই রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করেই রিকশাচালক থেকে হয়ে ওঠেন ইন্দিরা রোডের সুলতান! সুলতানি জারি রাখতে ঘটান নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। নাম তার দেলোয়ার হোসেন চুন্নু। তার বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন সময় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজির বিভিন্ন মামলা ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে অতীতের এসব বিষয় অস্বীকার করেছেন দেলোয়ার হোসেন চুন্নু। তিনি বলেন, আমি ১৯৭৯ সালে ঢাকায় আসি। ১৯৮৯ সাল থেকে গাড়ির ব্যবসা করি। মনিপুরী পাড়ায় আসি প্রথম, তারপর থেকে ইন্দিরা রোডে বসবাস শুরু করি। তালতলায় ছিলাম না।
জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার আন্দোলন দমাতে অস্ত্র হাতে ফার্মগেট এলাকা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। যদিও ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরে গা ঢাকা দিয়েছেন ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজদের এই সরদার। পুরনো সব মোবাইল নম্বর বন্ধ রেখে ব্যবহার করছেন দুবাইয়ের একটি নম্বর। যেটায় শুধু হোয়াটসঅ্যাপেই তাকে সক্রিয় পাওয়া যায়। তার পারিবারিক ও ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গাজীপুরের একটি বাসায় আত্মগোপনে আছেন। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে করতে চাচ্ছেন রফাদফা। সব ঠিকঠাক হলেই ফিরবেন ফার্মগেট এলাকায়।
এখনও আত্মগোপনে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন ইন্দিরা রোডের লেগুনা স্ট্যান্ড ফার্মগেট থেকে মোহাম্মদপুর হয়ে ধানমণ্ডি ও জিগাতলা পর্যন্ত প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ২০০ লেগুনা চলাচল করে। এসব লেগুনার সব থেকে বড় স্ট্যান্ড হলো ইন্দিরা রোড। এই স্ট্যান্ডে প্রায় ২৫০টি লেগুনা যাত্রী পরিবহন করে। তবে নিয়মিত চলে ২০০টির মতো। প্রত্যেকটি লেগুনা থেকে প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয় চুন্নুর নেতৃত্বে। সেই হিসাবে প্রতিদিন দুই লাখ টাকা চাঁদা আসে এই ছোট্ট পরিসর থেকে, যা মাসে ৬০ লাখ টাকা আর বছরে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকার মতো! চুন্নু এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও চুন্নুর নামে চাঁদা উঠছে প্রতিদিন।
ইন্দিরা রোড লেগুনা স্ট্যান্ডের সভাপতি আব্দুল খালেক সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিদিন তার নামে লেগুনা থেইকা চাঁদা ওঠে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এলাকার কাউন্সিলরের নামে এইসব করত। আমরা জানি তার (চুন্নু) লগে ওপর লেভেলের লোকজন আছে।
এ বিষয়ে চুন্নু বলেন, আমি ঢাকা শহরে অনেক আগে থেকেই লেগুনার ডিলার। করোনার সময় অল্প দামে কিছু লেগুনা কিনেছিলাম সেগুলো দিয়েই ব্যবসা করি। আমাকে কোনো দিন কেউ বলতে পারবে না কারও কাছ থেকে দশ টাকা নিয়েছি।
সুএঃ দেশ রুপান্তর
মন্তব্য করুন
Design & Developed by BD IT HOST