মোঃ আশরাফুল ইসলাম,
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত বিতর্কিত কমিটির সহ-সভাপতি ও আলোক হেলথকেয়ার এন্ড ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান হোসেন আগে জড়িত ছিলেন ছাত্র সমাজে পরে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক সংগঠনে যোগ দেন। গত ৬জুন উপজেলা আ’ লীগের সহ-সভাপতি হয়ে সে এখন নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী।
জানা যায়, উপজেলা আওয়ামীলীগের বিতর্কিত কমিটির সহ -সভাপতি ও আলোক হেলথকেয়ার এন্ড ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান হোসেন খুবই কৌশলী এবং ঠান্ডা মাথার তীক্ষ্ণ বুদ্ধির লোক। তার বাড়ি ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের (গর্জয়নাপাড়া-তেতুলতলা)রসুলপুর গ্রামে। তারা সাত ভাই দুই বোনের মধ্যে মিঠুন সরকার উরফে বারেক ব্যাতিত অন্যরা কেউ পত্যক্ষ কেউ পরোক্ষ ভাবে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত। দুই ভাই শাহজাহান আলী ও শহীদ সরকার এলাকায় বিএনপির চিহ্নীত কর্মী।লোকমান হোসেন নিজেও সব আমলেই সরকারী দলের সুবিধাভোগী লোক থাকায় প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর আশির্বাদে সে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির পদ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
সরোজমিনে তার নিজ গ্রামে গেলে তিনি কোনদিন আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এমন কোন প্রমান মেলেনি। স্থানীয়রা জানায়, একমাত্র তার ভাই মিঠুন সরকার ওরফে বারেক আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। পরে কথা হয় লোকমানের ভাই বারেকের সাথে। তিনি বলেন, আমি নয় বছর ইউনিয়ন আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রায় পাচ বছর যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম কিন্ত, লোকমান হোসেন কখনও, কোনদিন আওয়ামীলীগ করেছেন বলে আমার জানা নাই। তিনি আরোও বলেন, লোকমান হোসেন ১৯৮০ দশকের পর জাতীয় ছাত্র সমাজের রাজনীতিতে, পরবর্তীতে ১৯৯০ দশকের পর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক ইউনিয়নের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলেন। তবে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাংগাইল ৩ ঘাটাইল আসনের প্রয়াত এমপি ডাঃ মতিউর রহমানের সাথে আত্তীয়তার সুবাধে নির্বাচনের সময় তারপক্ষে কয়েকদিন ঘাটাইলে ঘুরাঘুরি করেছেন।
এ বিষয়ে ঘোনার দেউলী গ্রামের মৃত হায়েত আলীর ছেলে প্রবীণ আ’লীগের নেতা ফজল হক (৬৩) জানান, লোকমান হোসেন ও তার পরিবারের সকলেই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত।
রসুলপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, আমি কিছুদিন যাবত লোকমান হোসেনকে ঘাটাইল উপজেলা আ’লীগের সভাপতির সাথে ঘুরাঘুরি করতে দেখতেছি। এর আগে তাকে কোনদিন আওয়ামীলীগ করতে শুনি নাই এবং দেখি নাই।
রসুলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম জানান, আমি ৩৫ বছর যাবত আ’লীগের রাজনীতি করি। আমি কোনদিন লোকমান হোসেনকে কোন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন বা উপজেলার রাজপথে আ’লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হতে দেখি নাই। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় আসেন তবে কোন আওয়ামী লীগ কে ডাকেন না, শুধুমাত্র রসুলপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি, এক পরিবারের একজন শহিদুল ইসলাম শহীদ কে ডাকেন। শুনতেছি লোকমান হোসেন মনোনয়ন দাবী করছেন। যদি উনাকে কোনদিন মনোনয়ন দেওয়া হয় তবে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বিষয়টি ত্যাগী নেতাকর্মীদের মেনে নিতে কষ্ট হবে।
এসব বিষয়ের রসুলপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক জানান, আমাদের গ্রামের পাশেই লোকমান হোসেন এর বাড়ি। আমি তাকে ব্যাক্তিগত ভাবে চিনি এবং জানি। তার পরিবারের বারেক সরকার ব্যাতীত অন্যরা সকলেই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি আরোও বলেন, আমি ২৭ বৎসর যাবত আ’লীগের রাজনীতি করি, একদিনের জন্যও লোকমান হেসেনকে আওয়ামীলীগ করতে দেখি নাই। তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক না। তৃনমূলে কোথাও তার নামগন্ধ নাই, তিনি ঢাকা থেকে লেখাপড়া ও ব্যবসা করেন আমরা তাই জানি, কিন্ত হঠাৎ কিভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হলেন আমার বুঝে আসেনা।
এদিগে যার হাতে উপজেলা আ’লীগের কমিটির তালিকা হয়েছে খোদ সেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ৮১ সাল থেকে ঘাটাইল কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সারসরি জড়িত। এবং জিবিজি কলেজের ৮৬/৮৭ শিক্ষাবর্ষে নির্বাচিত ভিপি ছিলাম। আমি দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আজ এখানে এসেছি কিন্ত, লোকমান হোসেন কোনদিন, কখনো ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ বা অংগ সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলনা এমনি তৃনমূলে, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য না। এর আগে আমি তাকে চিনতাম-জানতাম না। প্রয়াত এমপি ডাঃ মতিউর রহমানের বড় ভাই এবং আলোক এর চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সাহেবের মাধ্যমে তার সাথে আমার পরিচয় হয়। তিনি ৬ জুন সম্মেলনের সময় কাউন্সিলর হয়েছিলেন বিধায় গঠনতন্ত্র মোতাবেক লোকমান হোসেন কে উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি করতে হয়েছে। তৃনমূলে কোথাও কোন পদ/পদবীতে না থাকলেও উপজেলার সহ-সভাপতি হতে পারেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমার বা উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে লোকমান কে কমিটিতে সদস্য বা সহ-সভাপতি হিসেবে যুক্ত করার ব্যাপারে কোন ইচ্ছা বা সম্পৃক্ততা ছিলো না, অনেকেই বিভিন্নভাবে কমিটিতে পথ পেয়েছেন তিনিও হয়তো সেভাবেই, তারমতো করে সহ-সভাপতি পদ পেয়েছেন। তবে চ্যালেঞ্জ করে বলতে পার, আমি অর্থের বিনিময়ে আমি কাউকে পদ দেইনি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা আ’লীগের বিতর্কিত কমিটির সহ-সভাপতি ও আলোক হেলথকেয়ার এন্ড ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান হোসেনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি জাতীয় ছাত্র সমাজ বা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক ইউনিয়নে জড়িত ছিলাম না, কেউ প্রমান দিতে পারবে না। আমি বিমানে চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় জাতীয় শ্রমিকলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলাম। আমার ব্যক্তিগত প্রতিপক্ষ কেউ হয়তো আমার সুনাম খুন্ন করার জন্য উল্টাপাল্টা কিছু বলতে পারে। আমার বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা পাঁচবার তদন্দ করে দেখেছে, আমি আ’লীগের রাজনীতি করি।