প্রতিনিধি ১৫ মার্চ ২০২৩ , ৯:৫২:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ
ইকবাল আহমেদ লিটন: বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একে অপরের পরিপূরক। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে কল্পনা করা যায় না। তিনি ছিলেন স্বাধীনতার প্রতীক ও খাঁটি দেশ প্রেমিক। তিনি বাংলার মাটি ও মানুষের জন্য অকাতরে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। বাংলার জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। রাজনীতিতে আদর্শ ও মূল্যবোধের চর্চায় এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। ইতিহাসের এই মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে যেমন জানতে হবে তেমনি তার জীবনী থেকে বর্তমান যুগের রাজনীতিবিদদের অনেক কিছু শেখার আছে। তিনি আজীবন নিয়মতান্ত্রিক ও অহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী ছিলেন। অনেক ঘাত, প্রতিঘাতের মাঝে বেড়ে ওঠা মানুষের মধ্যে যে চিন্তা-ভাবনা, চেতনা, কর্ম এক বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করে জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে স্বাধীনতা প্রিয় মানুষদের এক কাতারে নিয়ে সার্থক প্রতিনিধিরূপে আবির্ভূত হন ও ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেন। মহান সৃষ্টিকর্তা ইতিহাসের প্রয়োজনে কোনো কোনো মানুষের আবির্ভাব ঘটান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্ম ইতিহাসের প্রয়োজন হয়েছিল। এই মহান মানুষটির সেই বহুল প্রতিক্ষিত আশা ও ভালবাসার জন্মশতবর্ষ উদযাপন নিয়ে আজ আমার কিছু মনের কথা বলার আছে। প্রিয় পাঠক, আশা করছি আপনারা সাথেই থাকবেন।
হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে ২০২০ ও ২০২১ সালকে ‘মুজিব বর্ষ’ ঘোষণার কথা জানিয়েছেন আমাদের সুযোগ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ ও ২০২১ সালকে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাদের বাংলাদেশ সরকার। এই উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ই মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ই মার্চ পর্যন্ত বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচী পালন করা হবে। এমনিতে প্রতিবছর জাতির জনকের জন্মদিন উপলক্ষে ১৭ই মার্চ জাতীয় শিশু দিবস এবং ১৫ই আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার দিনটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়।
তবে মহীরুহসম কোন জাতীয় ব্যক্তির জন্মশতবর্ষ মানে আরও বিশেষ কিছু আনন্দ, উপভোগ এ যেন ঈদের চেয়েও বেশী খুসি অবশ্যই, যা ইতিহাসে চিরস্থায়ী দাগ রেখে যেতে সক্ষম হতে পারে। সঙ্গত কারণেই আমরা আশা করব যে, মুজিব বর্ষের বছরব্যাপী কর্মসূচী ও অনুষ্ঠানমালা তেমনই জাঁকজমকপূর্ণ, আকর্ষণীয় ও আড়ম্বরপূর্ণ হবে। এর জন্য এখন থেকেই যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া আবশ্যক। উল্লেখ্য, ২০২০ সালে পূর্ণ হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের জন্মের শত বছর। আর ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বছর। এ কথা বলা মোটেও অত্যুক্তি হবে না যে, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুকে চিন্তা করা যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিলে অর্থহীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশও। এ কথা তো ইতিহাসের অবিসংবাদী সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বোধ করি অপূর্ণ ও অধরাই থেকে যেত।
আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে শিক্ষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, সর্বোপরি সত্তরের নির্বাচনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ৭ই মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে তিনি বজ্রকণ্ঠে যে ভাষণ দেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তা হয়ে আছে এক চির অম্লান মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অমল ধবল স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। তিনি এবং কেবলমাত্র তিনিই তাঁর বলিষ্ঠ সুযোগ্য সুদৃঢ় অনমনীয় অকুতোভয়, সর্বোপরি দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে পৌঁছে দিয়েছেন স্বাধীনতার সুবর্ণ তোরণে। এর পরের ইতিহাস সবার জানা এবং তা বিশ্ববাসীরও অজানা নয়। ভাষণটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণের স্বীকৃতি পেয়েছে। কেবল একটি ভাষণ ‘ওয়ার্ল্ডস ডুকমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির গৌরব বহির্বিশ্বে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এমনকি, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশকে অভিহিত করেছেন ‘বিশ্ব নেতা’ হিসেবে, যা অনুসরণীয় হতে পারে অন্যান্য দেশের। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ কর্মযজ্ঞ। বাস্তবায়িত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র সহ অন্তত ১০টি মেগা প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর কক্ষপথ ঘিরে। এসবই মাত্র কয়েক বছরে সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে। এও ইতিহাসের এক অমোঘ সত্য যে, জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ তথা মুজিব বর্ষ উদযাপিত হতে যাচ্ছে তাঁরই কন্যার হাত ধরে। অতঃপর জাতির জনকের প্রজ্বলিত দীপ্ত শিখা তথা সমুজ্জ্বল আলো পৌঁছে যাক বাংলার ঘরে ঘরে, মাঠ-ঘাট প্রান্তরে, আকাশে-বাতাসে সর্বত্র এই আমাদের প্রত্যাশা।
২০২২ সালে তারই বহিঃপ্রকাশ কিছুটা ঘটতে শুরু করেছে।যেমন পদ্মা সেতু থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আরো ইত্যাদি।
পরিশেষে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও স্বাধীন বাংলাদেশের ইস্যুতে পুরো বাঙালি এক হতে পারেনি, কারণ তারা ছিল রাজাকার এবং পাকিস্তানিদের সাথে ঘনিষ্ঠ, যার প্রমাণ তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের মোট ভোটারের মাঝে নৌকায় ভোট প্রদানের শতকরা হার ও বিজয়ী আসন সংখ্যা। তেমনি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী সেটা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী, পুরো বাঙালি এবারো এক হবেনা, এটাই স্বাভাবিক। কেননা, জেনারেল নিয়াজির কুসন্তানেরা এখনও বাংলার মাটি গিলে খাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত হবেনা স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীদের সাথে কোন সংলাপে গিয়ে অযথা কোন লোক দেখানো জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়।
Design & Developed by BD IT HOST