ড. প্রদীপ হালদারঃ
বড়দিন বা ক্রিসমাস একটি খ্রিষ্টাব্দের ধর্মীয় উৎসব যা বাৎসরিক খ্রিস্টীয় উৎসব বা বড়দিন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে । ২৫ ডিসেম্বর তারিখে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়। এই দিনটিই যিশুর প্রকৃত জন্মদিন কিনা তা এখনো জানা যায়নি। আদিযুগীয় খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে, এই তারিখের ঠিক নয় মাস পূর্বে কুমারী মা মেরির গর্ভে প্রবেশ করেন যিশু। সম্ভবত, এই হিসাব অনুসারেই ২৫ ডিসেম্বর তারিখটিকে যিশুর জন্মতারিখ ধরা হয়।
আবার ইতিহাস বলছে, ২৫ ডিসেম্বর বেথেলহেম নগরের এক গোশালায় কুমারী মা মেরির কোলে জন্মেছিলেন যিশু।
বিশ্ব থেকে হিংসা মুছতেই আবির্ভাব হয়েছিল তাঁর। বাইবেলে কিন্তু যিশুর জন্মের তারিখের কোনও সুনির্দিষ্ট উল্লেখ নেই। তবু কেন আমরা ২৫ ডিসেম্বর তার জন্মদিন পালন করি?
রোমান দিনপঞ্জিকা অনুসারে,২৫ মার্চ যিশু মা মেরির গর্ভে আসেন। আবার ২৫ মার্চই তিনি ক্রুশবিদ্ধ হন। এই ২৫ মার্চের ন’ মাস পরেই আসে ২৫ ডিসেম্বর।ক্রিসমাসের শুরু: ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন এর আমলে প্রথম ক্রিসমাস উদযাপন শুরু হয়। এর পর পোপ জুলিয়াস ঘোষণা করেন যে ২৫ ডিসেম্বর যিশু খ্রিস্টের জন্মদিবস হিসেবে পালন করা হবে। রোমেই প্রথম যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন বা ক্রিসমাস পালিত হয়।
কীভাবে এক্স–মাস এলো?
ক্রিসমাস শব্দটিকে গ্রিসে বলা হয় Christos (χριστος)। যার বানানটা শুরু হয় এক্সের মতন দেখতে একটি অক্ষর দিয়ে। অনেকে মনে করেন এখান থেকেই এসেছে এক্স। আর ‘মাস’ কথাটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘মিসা’ থেকে।
ক্রিসমাসট ট্রি উৎসব – ২৫ ডিসেম্বর যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন উৎসব উপলক্ষে গাছ সাজানোর রেওয়াজ হাজার বছরের পুরনো। উত্তর ইউরোপে সে আমলে ফার গাছকে আলো দিয়ে সাজানো হত। সাজানো হত চেরি গাছকেও। গরিবরা কাঠের টুকরো জড়ো করে ত্রিভুজ আকার দিতেন। তার পর সাজাতেন আলো দিয়ে। আস্তে আস্তে এই রীতি ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে।
প্রকৃতিগতভাবে এটি খ্রিষ্টীয় ধর্মানুষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও, একাধিক অ-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও মহাসমারোহে বড়দিন উৎসব পালন করে।এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে উৎসবের আয়োজনে ধর্মনিরপেক্ষ বিষয় ভাবনার সমাবেশ এবং সকল ভেদাভেদ ভুলে সকলস্তরের মানুষের এ অনুষ্ঠান পালনে দেখা যায়।
এছাড়াও বড়দিনে উপহার প্রদান,সংগীত অনুষ্ঠান বড়দিনের কার্ড বিনিময়,গির্জায় উপাসনা,ভোজ এবং বড়দিনের বৃক্ষ আলোকসজ্জা, মালা, মিসলটো, যিশুর জন্মদৃশ্য, এবং হলি সমন্বিত এক বিশেষ ধরনের সাজসজ্জার প্রদর্শনী আধুনিককালে বড়দিন উৎসব উদ্যাপনের একটি অঙ্গ।
কোনো কোনো দেশে ফাদার খ্রিষ্টমাস (উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আয়ারল্যান্ডে সান্টাক্লজ) কর্তৃক ছোটদের জন্য বড়দিনে উপহার সামগ্রী আনার প্রচলন বেশ জনপ্রিয়।
বড়দিন উৎসবের নানা অনুষঙ্গ খ্রিষ্টান ও অ-খ্রিষ্টানদের অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
এই উৎসব উপলক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয়ের একটি বিশেষ মরসুম চলে। বিগত কয়েকটি শতাব্দীতে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বড়দিনে অর্থনৈতিক প্রভাবটি ধীরে ধীরে প্রসারিত হতে দেখা গেছে। এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় ভারত ও বাংলাদেশে বড়দিন উৎসব পালিত হয় এবং এই দিনটি একটি রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।