অন্যান্য

আজ হাছন রাজা’র জন্মদিন

  প্রতিনিধি ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ , ২:৪০:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ

 

হাছন রাজা ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর

৭ পৌষ ১২৬১ বঙ্গাব্দ জন্মগ্রহণ করেন।বহু লোকের মধ্যে চোখে পড়ে তেমনি সৌম্যদর্শন ছিলেন তিনি।

 

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না হলেও তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। তিনি সহজ-সরল সুরে আঞ্চলিক ভাষায় প্রায় সহস্রাধিক গান রচনা করেন।

 

পাখি ভালোবাসতেন। ‘কুড়া’ ছিল তার প্রিয় পাখি। তিনি ঘোড়া পুষতেন। তার প্রিয় দুটি ঘোড়ার নাম ছিল জং বাহাদুর এবং চান্দমুশকি।এই ভাবে রাজার মোট ৭৭টি ঘোড়ার নাম পাওয়া যায়।

বিশাল ভূসম্পত্তির মালিক প্রথম যৌবনে তিনি ছিলেন ভোগবিলাসী এবং শৌখিন।

 

তিনি ছিলেন হিন্দু রাজবংশের উত্তরাধিকারী। সিলেটের রামপাশা ও সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রী মিলে বিস্তৃত ছিল তাঁদের রাজত্ব।

পূর্বপুরুষ ক্ষত্রিয় রাজা বীরেন্দ্র চন্দ্র সিংহদেব সিলেট সুনামগঞ্জ এলাকায় বড় জমিদারির পত্তন করেন। বীরেন্দ্র চন্দ্র রাজা বাবু রায়চৌধুরী নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। পরে তিনি ইসলাম ধৰ্ম গ্রহণ করে রাজা বাবু খান চৌধুরী নাম নেন। পিতা আলী রাজা ও তাঁর পঞ্চম পত্নী হুরমত জাহাঁ বিবির সন্তান ছিলেন হাছন।

 

তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা বাড়িতে মায়ের কাছেই হয়েছিল। হাছন বাংলা,হিন্দি, আরবি ও ফার্সি ভাষাও শিখেছিলেন। তাঁর বাংলাল হাতের লেখা ছিল খুবই সুন্দর।

বাংলায় “দেওান হাছন রাজা চৌধুরী” হিসেবে স্বাক্ষর করলেও আরবিতে হাছন রেজা নামে স্বাক্ষর করতেন। তিনি।

 

এক আধ্যাত্মিক স্বপ্ন রাজার জীবন দর্শন আমূল পরিবর্তন করে । চরিত্রে আসে সৌম্যভাব। বিলাস প্রিয় জীবন ছেড়ে বিষয়-আশয়ের প্রতি তিনি নিরাসক্ত হয়ে উঠলেন। তাঁর মনের মধ্যে এলো এক ধরনের উদাসীন বৈরাগ্য।

 

সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর নেয়া হয়ে উঠলো প্রতিদিনের কাজ।

সকল কাজের উপর গান রচনায় হাসন হয়ে উঠলেন এক সাধক কবি।

হাছন রাজা হিন্দি ভাষাতেও অনেকগুলি গান রচনা করেছেন।

রাজর্ষিদের মতো শব্দ নিয়ে গান বাঁধতেন তিনি।

গানগুলির প্রধান বিষয়বস্তু ছিল ঈশ্বরের ধারণা, তাঁর প্রতি ভক্তি এবং স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক।১৯১৪ সালে ২০৬টি গান নিয়ে ‘ হাছন উদাস’ ল নামে

রাজার গানের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়।

হাছন রাজার কথা প্রথম জনসমক্ষে নিয়ে আসেন প্রভাতল কুমার শর্মা । ১৯২৪ সালে তিনি এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথকে রাজার কথা জানান। সেই বছরই প্রভাত কুমার মুরারীচাঁদ কলেজ ম্যাগাজিনে হাছন রাজাকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ লেখেন। পরের বছর তিনি রবীন্দ্রনাথকে হাসনের ৭৫ টি গান পাঠান।

 

রবীন্দ্রনাথের সিলেট সফরের সময় ‘হাছন উদাস’-এর একটি কপি রবীন্দ্রনাথের হাতে আসে।

হাছন রাজা তখনো জীবিত এবং নিতান্তই অপরিচিত এক কবি। হাছন রাজার নাম তিনি শোনেন নি ।

তাঁর সঙ্গে হাছন রাজার কোনদিন দেখা হয় নি । অথচ

বিশ্বসভায় হাছন রাজাসহ বহু গ্রাম্য কবিকে তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 

১৯২৫ সালে ভারতীয় দর্শন সমিতির সভাপতির ভাষণে ‘হাছন উদাস’ এর একটি গান উদ্ধৃত করেন তিনি ।

 

১৯৩০ সালে ‘The Religion ofল Man’ শিরোনামে অক্সফোর্ডে দেওয়া ‘হিবার্ট লেকচার’-এ রবীন্দ্রনাথ একই বিষয়ের পুনরুল্লেখ করেন।অক্সফোর্ডের বক্তৃতায়

হাছনের কবিতাকে বাংলাল ভাষার এক অমূল্য সম্পদ বলতে তিনি দ্বিধা করেননি।ল

 

রাজার ভাবনায় ছিল মানুষ, জীবন,প্রকৃতিল ও জগৎ। তাঁর গান বা কবিতার দর্শনকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপলব্ধি করেছিলেন। আন্তর্জাতিক পরিসরে বক্তৃতা করতে গিয়ে তিনি হাছন রাজার এই দর্শনের কথা তুলে ধরেছেন।

প্রশংসা করেছেন ।

 

রবীন্দ্রনাথের এই স্বীকৃতি হাছন রাজাকে সিলেটের শিক্ষিত সমাজে এবং পরবর্তীকালে সারা বাংলায় পরিচিত ও স্বীকৃত হতে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে।

আরও খবর

Sponsered content

Design & Developed by BD IT HOST